রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী এলাকায় সিটি টোলের নামে চাঁদা উত্তোলন ঘিরে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে পরিবহন শ্রমিক ইমরান হোসেন (৩৫) খুন হয়েছেন। এ ঘটনায় ওয়ার্ড কাউন্সিলরসহ ২১ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন নিহতের স্ত্রী।

পুলিশ জানায়, ইমরান সিটি টোলের নামে নয়, চাঁদা তুলতেন ঢাকা জেলা ট্রাক ট্যাংক-লরি কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের নামে। অন্য কাউকে খুন করার পরিকল্পনা ছিল, তবে খুনিদের ভুলে খুন হন ইমরান।

মামলার আসামিরা হলেন, স্থানীয় ৫০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মাসুম মোল্লাসহ (৫০), আকরাম উজ্জামান ওরফে উজ্জল মোল্লা (৩৫), মো. মুস্তাকিম (২৮), মো. শুভ (২৪), মোহাম্মদ আলী (২৭), মো. আরিফ (৩৮), তানজিল মিয়া (২৪), বুলু বাবু (৫০), পলাশ (২৭), মো. জামাল (৩০), রাজিব (২৮), রমজান মোল্লা (৩৭), জাহিন (৪০), মো. দেলা (৩৮), মো. হাসান (২৯), মো. সাগর (২৭), মো. রাজু (২৫), মো. সুমন (২৫), ফয়সাল (২৫), পারভেজ (২৬), মো. সোহেল (২৯), মো. রাজন (২৫)। মামলায় আরও ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

নিহতের স্ত্রী পপি আক্তার মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, তার স্বামী মো. ইমরান পেশায় পিকআপচালক। ঢাকার যাত্রাবাড়ীর দক্ষিণ কাজলা নয়ানগরে ভাড়া বাসায় তারা বসবাস করতেন। পাশাপাশি কাঁচা বাজারে পিকআপ, ট্রাকের কুলি মুজুরির টোল আদায় করতেন ইমরান। গত ২৩ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টার দিকে যাত্রাবাড়ী থানাধীন কাঁচা বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হন ইমরান। রাত সাড়ে ১১টার দিকে খবর পাই টোল আদায়কে কেন্দ্র করে আমার স্বামী খুন হয়েছেন। আমি ও আমার পরিবারের লোকজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে গিয়ে আমার স্বামীর মরদেহ শনাক্ত করি।

পপি বলেন, রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১১টা ৫০ মিনিটের মধ্যে যে কোনো সময় ইমরানকে তার কর্মস্থলে টোল আদায়কালীন অবস্থায় হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তিনি জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিটি টোলের ইজারা নিয়েছে ‘৭-ইলেভেন’ নামে এক ইজারাদার প্রতিষ্ঠান। ৭-ইলেভেন এর কাছ থেকে সাব–কন্ট্রাক্টে পণ্যবাহী ট্রাক থেকে চাঁদা তুলতেন উজ্জ্বল মোল্লা। তবে নতুন করে আল–আমিন সাব কন্ট্রাক্টে চাঁদা তোলার দায়িত্ব পাওয়ায় উজ্জ্বল মোল্লা ক্ষিপ্ত হন। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে এই চাঁদা তুলছিলেন আল–আমিনের লোকজন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল।

চাঁদা তোলার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উজ্জ্বল মোল্লার লোকজন কয়েক দিন আগে আল–আমিনের লোকজনকে মারধর করে। গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে আবারও হামলা করতে আসে উজ্জ্বল মোল্লার লোকজন। আল–আমিনের দলের সদস্য ভেবে ইমরানসহ তিনজনের ওপর হামলা চালায় তারা।

পুলিশের ডেমরা অঞ্চলের সহকারী কমিশনার (এসি) মধুসূদন দাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইমরান খুনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এজাহারনামীয় ৫ আসামিসহ মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ইমরানকে খুনের টার্গেট ছিল কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, খুনিদের পরিকল্পনায় ইমরান ছিল না। তবে ইমরান উদ্ভূত পরিস্থিতির ‍শিকার হয়েছেন।

সিটি টোলের নামে চাঁদা উত্তোলন ও ইমরান খুনে স্থানীয় ৫০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মাসুম মোল্লাসহ তার পরিবার স্বজনদের যোগসাজশের অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, অভিযোগ আছে। মামলাতেও কাউন্সিলরের নাম আছে। আমরা অধিকতর তদন্ত করছি। তদন্তে দায়ী কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

জেইউ/এসকেডি