গাইবান্ধা সদরে একটি মসজিদের নামে সরকারি বরাদ্দের টাকা তুলে নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মোসাব্বীর হোসেনের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে গত ১৬ নভেম্বর প্রতিবেদন প্রকাশ করে দেশের শীর্ষ স্থানীয় অনলাইন গণমাধ্যম ঢাকা পোস্ট।

এ প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে মতামতসহ প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য গাইবান্ধার জেলা প্রশাসককে (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

বিভাগের উপ-সচিব মোহাম্মদ সাঈদ-উর-রহমান স্বাক্ষরিত এ চিঠি বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) গাইবান্ধার জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, গাইবান্ধা জেলার সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাব্বীর হোসেনের বিরুদ্ধে ঢাকা পোস্ট পত্রিকায় (কপি সংযুক্ত) ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মসজিদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে মতামতসহ প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

ঢাকা পোস্ট সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা

এ প্রতিবেদনের জেরে গত ৮ জানুয়ারি ঢাকা পোস্টের সম্পাদক মহিউদ্দিন সরকার ও গাইবান্ধা প্রতিনিধি রিপন আকন্দের নামে গাইবান্ধায় হয়রানিমূলক, মিথ্যা চাঁদাবাজি ও আইসিটি আইনে মামলা করেন চেয়ারম্যান মোসাব্বির।

চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন

ইউপি চেয়ারম্যান মোসাব্বিরের বিরুদ্ধে দুটি মসজিদের নামে বরাদ্দ হওয়া সরকারি অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। গত ১৫ জানুয়ারি দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জাহিদ হাসান দিদ্দিককে প্রধান করে তিন সদস্যের এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন— সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরিফুল আলম এবং কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা জুয়েল মিয়া।

আরও পড়ুন : ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মসজিদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

যা আছে ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদনে

গাইবান্ধা সদরে একটি মসজিদের নামে সরকারি বরাদ্দের টাকা তুলে নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মোসাব্বীর হোসেনের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের রোস্তমের মোড়ে অবস্থিত নূরে রহমত জামে মসজিদের নামে ২০২১-২২ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ উন্নয়ন প্রকল্পে মসজিদ সংস্কার বাবদ বরাদ্দ দেওয়া হয় ৫৫ হাজার টাকা। ওই টাকা মসজিদের বর্তমান সভাপতি মাহবুর রহমান মসজিদ কমিটি কিংবা কোনো মুসল্লিকে না জানিয়ে নিজেই প্রকল্প সভাপতি হয়ে তুলে নেন। পরে মসজিদ কমিটির হাতে মাত্র ১৪ হাজার দিয়ে বাকি ৪১ হাজার টাকা সভাপতি, ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান ভাগ বাটোয়ারা করে নেন।

এ বিষয়ে নূরে রহমত জামে মসজিদের তৎকালীন সভাপতি মো. নূর ইসলাম বলেন, নারী ইউপি সদস্যের স্বামী মাহবুর রহমান আমাদের ১৪ হাজার টাকা দিয়েছেন। মসজিদের নামে কোনো বরাদ্দ ছিল কি না তা আমরা জানি না। আমাদের আর কোনো টাকা দেওয়া হয়নি। টিআর প্রকল্প সম্পর্কে আমাদের জানানোও হয়নি।

তবে অভিযুক্ত মাহবুর রহমান প্রথমে অর্থ আত্মসাতের বিষয় অস্বীকার করলেও পরে সব স্বীকার করেন। তিনি বলেন, প্রকল্পটা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পাইছি। আমার স্ত্রী এই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য। আমাদের একটা ফোরাম আছে। ছয় ইউপি সদস্যকে ৩ হাজার করে টাকা দিছি। চেয়ারম্যানকে দেওয়া লাগছে পাঁচ হাজার আর মসজিদে ১৪ হাজার টাকা। কিছু টাকা অফিস খরচ গেছে, বাকিটা আমার বউ আর আমার।

অপরদিকে, একই অর্থবছরে টিআর এর দ্বিতীয় পর্যায়ে ইউনিয়নের জগৎরায় গোপালপুরের জাবালে রহমত জামে মসজিদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৫৭ হাজার টাকা। ইউপি চেয়ারম্যান ওই মসজিদ কমিটির সভাপতি আবুল কাশেমকে প্রকল্প সভাপতি বানিয়ে মসজিদে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে বাকি ৩২ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন।

জাবালে রহমত জামে মসজিদের সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, চেয়ারম্যান আমাদের প্রকল্পের কথা জানিয়ে শর্ত দিয়েই ২৫ হাজার টাকা দিয়েছে। আমরা যদি তাতে রাজি না থাকতাম তবে এই ২৫ হাজার টাকাও তিনি অন্যখানে দিতেন বলে জানিয়েছিলেন। তাই আমরা রাজি হয়েছি।

অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মোসাব্বীর হোসেন অস্বীকার করে বলেন, মসজিদ-মাদ্রাসার টাকা আমরা খাই না। কেউ যদি বলে থাকে তা মিথ্যা বলেছে।

তবে অফিস খরচের নামে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আনিছুর রহমান। তিনি বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী স্ট্যাম্পের টাকা ছাড়া অফিস খরচ হিসেবে অতিরিক্ত কোনো টাকা নেওয়া হয় না। অফিস খরচ নেওয়ার বিষয়টি ভিত্তিহীন।

এসব বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রকল্পের টাকা আত্মসাতসহ সব অভিযোগের বিষয়ে আমরা খোঁজ-খবর নেব। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অর্থ ফেরতসহ তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এসএইচআর/এসএসএইচ/