নিহত অটোরিকশাচালক একরাম হোসেন/ সংগৃহীত ছবি

চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় অটোরিকশা মালিক সমিতির লাইনম্যানের নেতৃত্বে চার ব্যক্তি খুন করেন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের অটোরিকশাচালক একরাম হোসেনকে (২০)। হত্যাকারীরা সবাই অটোরিকশাচালক। তাদের গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন হয়েছে বলে দাবি করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

গ্রেপ্তার হওয়া চার অটোরিকশা চালক হলেন— লাইনম্যান নূর আহাম্মদ, মো. জাহেদ হোসেন (২০), মো. মোস্তাফিজুর রহমান সাকিব (২০) ও মো. ইসমাইল হোসেন রানা (২৪)। গ্রেপ্তারকৃত চারজনের বাড়ি সীতাকুণ্ড উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।

পিবিআই সূত্র জানায়, গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর বিকেলে একরাম হোসেন তার অটোরিকশা নিয়ে সড়কে বের হন। ওইদিন রাত ৮টা ২৫ মিনিটের দিকে সীতাকুণ্ড পৌরসভার মধ্যম মহাদেবপুর এলাকায় ইপসা অফিসের সামনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরে তাকে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় নিহতের ভাই নুরুল হুদা বাদী হয়ে সীতাকুণ্ড থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশের পাশাপাশি মামলাটির ছায়াতদন্ত শুরু করে পিবিআই। গত ২৫ জানুয়ারি সন্ধ্যার পর থেকে রাত পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে পিবিআই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করে।

এরপর মামলাটির তদন্তভার নিজেদেরে হাতে নিয়ে পিবিআই আদালতের মাধ্যমে আসামিদের রিমান্ডে নেয়।

রিমান্ডে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আসামি নূর আহাম্মদ সীতাকুণ্ডের দক্ষিণ বাইপাস সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক। অটোরিকশা চালানোর পাশাপাশি চাঁদা আদায়ের জন্য এই সমিতি খোলেন তিনি। অন্য আসামিরা অটোরিকশা চালানোর পাশাপাশি চাঁদা আদায়ে নুর আহাম্মদের সহযোগী ছিলেন। এই লাইনে অটোরিকশা চালাতে হলে প্রত্যেক চালককে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। ভুক্তভোগী একরামকে আসামি নুর আহাম্মদ চাঁদা দিতে চাপ দেন। কিন্তু একরাম চাঁদা দিয়ে অস্বীকৃতি জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নুর আহাম্মদ একরামকে খুন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।

ঘটনার দিন (গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় আসামিরা সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড বাজারে গোপন বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন নুর আহাম্মদ। ঘটনার দিন সন্ধ্যা থেকে আসামিরা অটোরিকশাযোগে একরামের অটোরিকশাকে অনুসরণ করতে থাকেন। একপর্যায়ে একরামের অটোরিকশাটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড পৌরসভার মধ্যম মহাদেবপুর এলাকায় ইপসা অফিসের সামনে পৌঁছালে নুর আহাম্মদকে বহনকারী অটোরিকশার মাধ্যমে তাকে গতিরোধ করা হয়। এরপর আসামিরা একরামকে মারধর এবং ছুরিকাঘাত করেন। রক্তাক্ত অবস্থায় একরামকে ফেলে আসামি নুর আহাম্মদ এবং সাকিব অটোরিকশাযোগে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। আরেক আসামি রানা রাস্তা পার হয়ে বাসযোগে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। ঘটনাস্থলে লোকজন উপস্থিত হয়ে যাওয়ায় আসামি জাহেদ উদ্ধারের কৌশল করে ভুক্তভোগীর অটোরিকশা চালিয়ে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।

পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসপি) নাজমুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, নিহত একরাম অটোরিকশা চালক হওয়ায় বেশ কয়েকজন অটোরিকশা চালককে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করি। একপর্যায়ে দুই আসামি শনাক্ত হয়। তাদের দেওয়া তথ্যে বাকি দুজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জানা গেছে, চাঁদা না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে এই চারজনই একরামকে খুন করেছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহাদাত হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আসামিরা পিবিআইয়ের হেফাজতে রিমান্ডে রয়েছেন। আজ (শনিবার) সকালে তাদের সীতাকুণ্ডে নিয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন ও আসামি গ্রেপ্তার হওয়ায় পিবিআইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নিহতের ভাই ও মামলার বাদী মো. নুরুল হুদা। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ভাই কী কারণে কাদের হাতে মারা গেছে আমরা কেউ জানতাম না। মারা যাওয়ার আগে আমার ভাই একদিন আমার মাকে চাঁদার কথা বলেছিলেন। তবে আমরা বিষয়টি খেয়াল করিনি। পিবিআই হত্যাকাণ্ডে জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি খুনিদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি।

এমআর/এসএসএইচ/জেএস