ভাঙা পা দিয়ে অনবরত রক্ত ঝরছে, যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। মাথায় আঘাতের কারণে কাউকে চিনতে পারছেন না। এমন রোগীদেরও সেবা পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল)। রোগীর চিকিৎসার জন্য স্বজনরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আনসার সদস্য, নার্স, চিকিৎসকদের কাছে ছুটলেও তেমন সাড়া মিলছে না।

কর্তৃপক্ষ বলছে, সক্ষমতার বেশি রোগী আসায় হাসপাতালে আসামাত্রই রোগীদের জরুরি চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

সোমবার (১৫ মার্চ) সকালে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি ৫-১০ মিনিট পরপর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে জরুরি বিভাগে রোগী আসছেন। এ বিভাগে রোগীকে প্রথমে ট্রলির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এরপর ট্রলি নিয়ে ২০ টাকা মূল্যের টিকিট কেটে চিকিৎসকের কক্ষের সামনে আনসারের কাছে জমা দিতে হয়। আনসার সেগুলো জমা নিয়ে সিরিয়াল অনুযায়ী রোগী ডাকেন। তাতে গুরুতর রোগীকেও চিকিৎসা পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়।

সকাল ৯টায় রাজধানীর ডেমরা থেকে ভাঙা পা নিয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন শ্রমিক জনি। জাহাজের ডিপোতে কাজ করার সময় তার বাম পা ভেঙে যায়। মাথায়ও আঘাত পান, রক্ত ঝরছে। চিকিৎসা নিতে জরুরি বিভাগ হয়ে ডাক্তারের কাছে পৌঁছাতে তার সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টা। এ সময় পায়ের যন্ত্রণায় জরুরি বিভাগের ওয়ার্ডে তার চিৎকারে অন্য রোগীরাও অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন।

জনির সঙ্গে আসা শ্রমিক এনায়েত উল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা তিনজন জনিকে নিয়ে এসেছি। এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর ডাক্তার দেখতে এসেছেন। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য অনেক পরীক্ষা ও এক্সরে করতে দিয়েছেন।

রিকশার ধাক্কায় ডান পা ভেঙে গেছে তানভীর আহমদের। তিনি সকাল ১০টায় জরুরি বিভাগে এসেছেন স্ত্রী-ভাইসহ। হাসপাতালের বেডে বসে ব্যথায় কাতরাচ্ছেন, কিন্তু এক ঘণ্টা পার হলেও ডাক্তার তাকে দেখতে আসেননি।

একই অভিযোগ মহাখালীতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে আসা মহিদুল ইসলামের সহকর্মী মঞ্জুর আহমেদের। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, মহাখালীর চেয়ারম্যান বাড়ির সামনে বাসের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয় মহিদুল। খবর পেয়ে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। কিন্তু ডাক্তারই আসছে না।

জরুরি সেবা বিভাগে দায়িত্বরত আনসার সদস্য মফিজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে যে স্যার আছেন তিনি কথা বলবেন না। বড় স্যাররা কথা বলবেন। এরপরও কর্তব্যরত ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার সার্বিক অবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তাদের একটাই কথা, পরিচালকের কাছে যান। হাসপাতালের সব বিষয়ে তিনি কথা বলবেন।

হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল গনি মোল্লার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। দুপুরে হাসপাতালে তার কক্ষে গিয়েও পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা জানান, আজ তিনি হাসপাতালে আসেননি।

হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক ঢাকা পোস্টকে জানান, সক্ষমতার চেয়ে রোগী বেশি হওয়ায় সময়মতো চিকিৎসা দেওয়া যাচ্ছে না। এজন্য রোগীদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সীমাবদ্ধতার কারণে সব রোগীকে দ্রুত সেবা দেওয়া যাচ্ছে না।

এমআই/জেডএস/এমএআর/এমএমজে