প্রতারক কামরুজ্জামান

শিক্ষিত চাকরিজীবীর (৪০) জন্য নামাজি পাত্রী যোগাযোগ করুন। কিংবা সরকারি চাকরিজীবী (৪৫), স্ত্রী মৃত, সন্তান নেই- এমন পাত্রের জন্য যে কোনো জেলার নামাজি পাত্রী যোগাযোগ করুন। জাতীয় দৈনিকগুলোতে এমন চটকদার ‘পাত্রী চাই’ বিজ্ঞাপন দিতেন কামরুজ্জামান (৬০)। নিজেই সাজতেন পাত্র। আর ধনাঢ্য নারীরা যোগাযোগ করলেই ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিতেন লাখ লাখ টাকা।

প্রতারণার কৌশল হিসেবে কামরুজ্জামান নিজেকে কখনো বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, আবার কখনো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিস্টেম এনালিস্ট হিসেবে পরিচয় দিতেন। সর্বশেষ ৪০ বছর বয়সী এক নারী বিজ্ঞাপন দেখে তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। নানা কৌশলে তার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন কামরুজ্জামান।  অভিনব প্রতারণায় গত আড়াই বছরে হাতিয়েছেন অর্ধ কোটি টাকা।

এক মাসেরও বেশি সময় আগে উত্তরা পশ্চিম থানায় ওই নারী প্রতারণার মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত শেষে রোববার (১৪ মার্চ) রাতে রাজধানীর পল্টন থানার আহাদ পুলিশ বক্সের সামনে থেকে কামরুজ্জামানকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগের বিমানবন্দর জোনাল টিম।

এসময় তার হেফাজত থেকে রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ৬টি ছবি, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ৪টি এটিএম কার্ড, ৩টি জাতীয় পরিচয়পত্র ও একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। সোমবার (১৫ মার্চ) দুপুরে আদালত রিমান্ড মঞ্জুর না করে কামরুজ্জামানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

গোয়েন্দা উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. কায়সার রিজভী কোরায়েশী ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকায় পাত্রী চাই কলামে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন গ্রেফতার কামরুজ্জামান।

প্রতারণার কৌশল 

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, তিনি প্রতি সপ্তাহের বুধ বা বৃহস্পতিবার পাত্রী চাই বিজ্ঞাপন দেন। সেখানে লেখা থাকে যে, বাংলাদেশের যে কোনো জেলার সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের নামাজি পরহেজগার নারী, ডিভোর্সি (সন্তান থাকলেও আপত্তি নেই) এমন নারীরা সরাসরি পাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। 

পাত্রের পরিচয় দিতেন সরকারি কর্মকর্তা 

কামরুজ্জামান পাত্রের পরিচয় দিতেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হিসেবে। কখনো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিস্টেম এনালিস্ট হিসেবেও পরিচয় দিয়েছেন। বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য তিনি জাল কাগজপত্র ও ছবিও পাঠাতেন বিবাহে আগ্রহী নারীদের।

সুদর্শন পুরুষের ছবি দেখিয়ে নারীদের প্রলুব্ধ করতেন 

পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারীরা সরল বিশ্বাসে যোগাযোগ করতেন। তখন তিনি পাত্র হিসেবে দেখাতেন ৪০/৪৫ বছর বয়সী সুদর্শন অন্য পুরুষের ছবি। বিজ্ঞাপন প্রকাশের পর সারাদিন যোগাযোগ করা নারীদের মধ্যে ধনাঢ্য নারীদের শর্টলিস্ট করতেন তিনি। পরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন।

সম্পর্ক গভীর করে হাতিয়ে নিতেন নগদ টাকা 

বিবাহ করবেন বলে সুকৌশলে ধনাঢ্য নারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন কামরুজ্জামান। কখনো কখনো দেখাও করতেন। তিনি তাদের বলতেন, স্বপ্নে দেখেছি আমাদের দাম্পত্য জীবন সুখের হবে। তবে হযরত শাহজালালের মাজারে তিনটা গরু কিনে দিতে হবে। কখনো ফোনে বলতেন, পাত্র অসুস্থ, এক্সিডেন্ট করেছেন, হাসপাতালে ভর্তি, ২/৩ লাখ টাকা লাগবে। এভাবে ভালোলাগা ও আবেগের সুযোগ নিয়ে বিপুল পরিমাণ নগদ টাকা হাতিয়ে নিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দিতেন প্রতারক কামরুজ্জামান।

আড়াই বছরে হাতিয়েছেন অর্ধ কোটি টাকা 

জিজ্ঞাসাবাদে কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, আড়াই বছর ধরে এ অভিনব প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়েছেন অর্ধ কোটি টাকা। শুধু গত এক বছরে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে তিনি হাতিয়েছেন ২০ লাখ টাকা।

প্রাথমিক তদন্তে ও জিজ্ঞাসাবাদে এখন পর্যন্ত ১২ নারীর সঙ্গে গত এক বছরে প্রতারণার তথ্য মিলেছে। শুধু তাই নয়, কাজীর উপস্থিতিতে ভার্চুয়ালি বিয়েও করেছেন এ প্রতারক। তার কাছ থেকে তিনটি এনআইডি কার্ড পাওয়া গেছে। পুলিশ মনে করছে সেগুলো জাল। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

জেইউ/আরএইচ