স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) মর্যাদা থেকে উত্তরণের আগে এবং পরে বাংলাদেশের স‌ঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্য।

রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংলাপে এ আগ্রহের কথা জানিয়েছে লন্ডন।

সংলা‌পে বাংলাদেশের প‌ক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন ও যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্য কমিশনার অ্যালান জেমেল ওবিই।

ঢাকার ব্রিটিশ হাইক‌মিশন জানায়, সংলা‌পে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্য আরও বাণিজ্য-বিনিয়োগ বাড়াতে সম্মত হয়েছে। পাশাপা‌শি সংলাপে উভয়পক্ষ বার্ষিক সংলাপ এবং জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ (জেডব্লিউজি) নিয়মিত আয়োজন করতে রাজি হয়েছে। জেডব্লিউজিতে বিস্তৃত পরিসরে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয়গুলো আলোচিত হবে।  

হাইক‌মিশন জানায়, বিশ্বব্যাপী মহামারি এবং চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের ব্যাপক প্রভাব সত্ত্বেও যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিস্থাপকতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের উদার উন্নয়নশীল দেশের ট্রেডিং স্কিমকে (ডিসিটিএস) স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশকে একীভূত করে শক্তিশালী বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ বাড়ার ভূমিকা স্বীকার করেছে।

সংলাপে বলা হয়, যুক্তরাজ্য ডিসিটিএস’র অধীনে শ্রমের মান এবং মানবাধিকার, দুর্নীতি প্রতিরোধ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশনের প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে। যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন, বিনিয়োগ সহযোগিতা, ফার্মাসিউটিক্যালস, ব্যবসা করার সহজতা, আর্থিকখাতের উন্নয়ন, উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা, ট্যাক্সের সমস্যা এবং মেধাসত্ত্ব সুরক্ষার মতো ক্ষেত্রে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছে। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে আর্থিক ও পেশাগত সেবাসহ যুক্তরাজ্যের সেবাখাতে বিনিয়োগের সুযোগ অন্বেষণে উৎসাহিত করেছে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য উভয়েই তৈরি পোশাক খাতের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেছে।

বাংলাদেশে বিনিয়োগে বিদেশি কোম্পানিগুলোর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বজায় রাখার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের পূর্ণ সম্ভাবনা উন্মোচনের লক্ষে একটি বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা অনুসরণ করার জন্য দেশটির বেসরকারি খাতের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ এশিয়ার জন্য বাণিজ্য কমিশনার বলেন, যুক্তরাজ্য-বাংলাদেশ সম্পর্ক আমাদের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কের সম্ভাবনার ওপর নির্ভরশীল। যা আমাদের উভয় অর্থনীতির বিকাশে সহায়তা করবে। প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ চাকরি প্রদান, দক্ষতা স্থানান্তর, রাজস্ব বৃদ্ধি, প্রতিযোগিতা সৃষ্টি এবং মান উন্নত করার ভিত্তি তৈরি করে। একটি অনুকূল ব্যবসায়িক পরিবেশ ও বাজারে প্রবেশের বাধা অপসারণ উভয় দেশকে উপকৃত করবে এবং যুক্তরাজ্যের ব্যবসার জন্য দুর্দান্ত সুযোগগুলোকে সহায়তা করবে।

সংলাপ শেষে বাণিজ্য সচিব বলেন, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক পারস্পরিক স্বার্থ ও অভিন্ন মূল্যবোধের ভিত্তিতে। বাংলাদেশ বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে খুবই আগ্রহী। আমি বিশ্বাস করি, আজকের সংলাপ উভয় দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে অবদান রাখবে।

এনআই/এমএ