অমর একুশে ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। দিবস উপলক্ষে সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমে একুশের কর্মসূচি শুরু হয়েছে। কালো ব্যাজ ধারণ, প্রভাত ফেরিতে শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে।

শহীদ মিনারে মানুষের ঢল নেমেছে। বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এসেছেন কেউ আবার কেউ এসেছেন পরিবার নিয়ে। বেশিরভাগ মানুষের হাতে ফুল। যারা ফুল আনেননি তাদের জন্য শহীদ মিনারের আশপাশে অপেক্ষা করছে ফাতেমা-আলিফরা। ফুল, ফুলের ডালা, ফুলের তোড়া ও মাথার রিং বিক্রি করছে তারা।

রাজধানীর শাহবাগ থেকে টিএসসি হয়ে শহীদ মিনারের দিকের রাস্তা, হাইকোর্ট মাজার হয়ে শহীদ মিনারের দিকে রাস্তা, আজিমপুর হয়ে শহীদ মিনারের দিকের রাস্তায় ফুল নিয়ে অপেক্ষা তাদের। যারা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারের যাচ্ছেন তাদের অনেকেই এসব শিশুদের কাছ থেকে ফুল কিনে নিচ্ছেন। দোকান ছাড়াও ভ্রাম্যমাণ এসব বিক্রেতারাও ফুল বিক্রি করছে। বিক্রিও ভালো হচ্ছে।

হাইকোর্ট মাজার সামনে দিয়ে দোয়েল চত্বরের রাস্তায় এমনই এক ফুলবিক্রেতা শিশু ফাতেমা আক্তারের সঙ্গে কথা হলো। সে বলে, বাসা পাশেই, সকালেই ফুল নিয়ে এসেছি। আমার মাও এসেছেন, মা বসে ফুলের রিং বানাচ্ছে আর আমি ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছি। সকাল থেকে অনেক ফুল বিক্রি হয়েছে আমাদের। শহীদ মিনারের দিকে যারা আসছে তারাই ফুল কিনে নিচ্ছে।

টিএসসির সামনে কথা হয় ফুলবিক্রেতা শিশু আলিফের সঙ্গে। সে তার বাবার সঙ্গে ফুল বিক্রি করছে বলে জানিয়েছে। ফুল হাতে ক্রেতার অপেক্ষায় থাকা আলিফ জানায়, ফুল দিয়ে তৈরি মাথার রিং বিক্রি করছি ১২০ টাকা আর ফুলের তোড়ার দাম ১৫০ টাকা। ফুলের রিং বেশি বিক্রি হচ্ছে।

শিশু ফুলবিক্রেতার কাছ থেকে ফুল কিনে শহীদ মিনারের দিকে যাচ্ছিলেন সজিবুর রহমান ও তার বান্ধবী। তারা রাজধানী হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের শিক্ষার্থী। সজিবুর বলেন, শহীদ মিনারে যাচ্ছি শহীদের শ্রদ্ধা জানাতে। যেহেতু আগে থেকে ফুল কিনে রাখিনি তাই শিশুদের কাছ থেকেই ফুল কিনলাম। শহীদ মিনারের আশপাশে অনেক শিশু ফুল বিক্রি করছে।

ভাষা শহীদদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকে স্মরণ করে জাতি ‘অমর একুশে’, ভাষা শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করছে। এ বছর মাতৃভাষা আন্দোলনের ৭১ বছর পূর্ণ হলো।

১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দেয়। যে কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও দিবসটি পালিত হচ্ছে।

ভাষা আন্দোলনের সেই বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে খালি পায়ে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গাইতে গাইতে হাতে ফুল নিয়ে সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন।

এএসএস/ওএফ