সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ

তিস্তা চুক্তি না হওয়ার বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো ব্যর্থতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের আগে দুই দেশের পানিসম্পদ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়ে দুইপক্ষ একমত হয়েছিল। মনমোহন সিংয়ের সফরেই বহু প্রতীক্ষিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় তা আটকে যায়। 

নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার ভারতের ক্ষমতায় আসার পর এ চুক্তি নিয়ে আশার কথা শোনা গেলেও মমতার মত বদলায়নি। এতে করে এখনও এ চুক্তি হয়নি।  

তিস্তা চুক্তি নিয়ে সরকার ধুম্রজালের ভেতরে রেখেছে অর্থাৎ সুরাহার কোনো কথা সরকার বলছে না- বিএনপি থেকে এমন অভিযোগ করা হয়েছে বলে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানতে চান একজন সাংবাদিক। জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে তো অনেক দূরে এগিয়েছি আমরা। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে এ ব্যাপারে অনেক দূর এগোনো হয়েছে। কিন্তু ভারতের সংবিধান অনুযায়ী রাজ্য সরকারের অনুমতি লাগে। যেহেতু এটি ভারতের একটি রাজ্য এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে চুক্তি হবে, এখানে অবশ্যই রাজ্য সরকারের অনুমোদন লাগে। তাই এখানে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো ব্যর্থতা নেই। তাদের যে একাগ্রতা, সেটি আছে। রাজ্য সরকারের অনুমোদন পেলে সেটি হবে। এটি তারাও বোঝে। বুঝেও না বোঝার ভান করে। এটি অপ্রাসঙ্গিক হলেও প্রসঙ্গ বানানোর চেষ্টা করছে। আসলে বিএনপি কোনো ইস্যু খুঁজে পাচ্ছে না বলে খড়কুটো ধরে চেষ্টা করছে, এছাড়া অন্য কিছুই নয়।  

তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, যারা ব্যর্থ ছিল তারা সবসময় সবকিছুর মধ্যেই ব্যর্থতা দেখে। কারণ, তারা যখন দেশ পরিচালনা করেছে, তখন চরমভাবে ব্যর্থ ছিল। তবে কিছু ব্যাপারে তারা সফল ছিল। সেটি হচ্ছে দেশকে পরপর দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন বানানো এবং দেশকে জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্য বানানোর ক্ষেত্রে সফল ছিল। বাকি সব বিষয়ে তারা ব্যর্থ ছিল। এজন্য তারা সবকিছুতে ব্যর্থতা দেখার চেষ্টা করে। 

বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের প্রসঙ্গে আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, বিএনপির একটি অভিনন্দন দেওয়া প্রয়োজন ছিল সরকারকে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীকে। প্রধানমন্ত্রী মানবিক দিক বিবেচনা করে বেগম খালেদা জিয়াকে তার শাস্তি ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখেছেন, কিন্তু বিএনপি ধন্যবাদ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আসলে বিএনপি ধন্যবাদ দেওয়ার সংস্কৃতি লালন করে না। কাউকেই ধন্যবাদ দিতে পারে না। 

সীমান্ত হত্যা নিয়ে বিএনপি বিভিন্ন সময় প্রশ্ন তোলে। যেহেতু ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসছেন, এই বিষয়টি আপনাদের আলোচনায় থাকবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সীমান্ত হত্যা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। ইতোমধ্যে সীমান্ত হত্যা অনেক কমেও গেছে। আগে যে সীমান্ত হত্যা হতো, সেটি এখন অনেক কমে গেছে। তবে আমরা চাই সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় আসুক। এটি নিয়ে সবসময় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে আলোচনা হচ্ছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়েও আলোচনা হচ্ছে। 

নিজেদের প্লাটফর্মে নিউজ কন্টেন্ট প্রকাশের জন্য গুগল ও ফেসবুকের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে বিশ্বে প্রথম দেশ হিসেবে আইন পাস করেছে অস্ট্রেলিয়া। এর অধীনে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যমগুলোকে বেশ আকর্ষণীয় পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হবে গুগল ও ফেসবুককে। বিষয়টি মন্ত্রীর নজরে এসেছে কিনা এবং এটি নিয়ে কোনো চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে কি না, তা জানতে চান আরেকজন সাংবাদিক। 

জবাবে সরকারের এ মন্ত্রী বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ওটিটি প্লাটফর্ম (ওভার দ্য টপ) ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে সম্প্রচার, এটি পৃথিবীর বাস্তবতা। এই বাস্তবতাকে আমাদের মেনে নিতে হবে। কিন্তু এটি এখন যেভাবে কোনো বিধি-নিষেধ ছাড়া পরিচালিত হচ্ছে, সেটি হতে পারে না। সেজন্য আমরা একটি নীতিমালার ভিত্তিতে যাতে এগুলো পরিচালিত হয় এবং একইসাথে তারা যে ব্যবসা করছে, সেখানে সে ব্যবসা করার জন্য ট্যাক্স দিচ্ছে না, সেটি যাতে ট্যাক্সের আওতায় আসে, সেজন্য সরকার কাজ করছে। বিশেষ করে আমাদের মন্ত্রণালয় কাজ করছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েক দফা মিটিং হয়েছে। আমরা খুব সহসাই এজন্য একটি নীতিমালা তৈরি করে সেটি স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করতে পারবো বলে আশা করছি। যাতে অনলাইন মিডিয়াগুলো পরিচালিত হয়, ওটিটি প্লাটফর্মগুলো পরিচালিত হয়। সহসাই আমরা এটি সম্পাদন করতে পারবো। তারা যাতে ট্যাক্সের আওতায় আসে, সেটিও আমরা করছি।   

তিনি আরও বলেন, আমরা ইউটিউব এবং ফেসবুককে ক্রমাগতভাবে বলে যাচ্ছি ট্যাক্স দেওয়ার জন্য। তারা প্রথমদিকে তো সব কিছুই ডিনাই (প্রত্যাখ্যান) করেছিল। এখন তারা এগ্রি (একমত) করে যে তাদের ট্যাক্স দিতে হবে। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের কমিটি কাজ করছে। তাদের রিকমেন্ডেশন (সুপারিশ) এলে তখন আমি বলতে পারবো, আমরা কী করতে পারবো। তবে এটি সত্য, অন্য দেশ থেকে পরিচালিত হয়ে আমাদের দেশে ব্যবসা করছে এবং অন্যের ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, যিনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাকে কোনো লভ্যাংশের অংশ দেবে না, সেটি হওয়া অনুচিত। 

এসএইচআর/এনএফ