গুলশান কড়াইল বস্তিতে ৬০টি ঘর ভাড়া দিতেন ফাতেমা বেগম। ঘর প্রতি ভাড়া পেতেন ১৫০০ থেকে আড়াই হাজার। এক আগুনে তার সব ঘর পুড়ে ছাই। শুধু ভাড়াটিয়াদের ঘরই পুড়েনি, নিজের ঠাঁইটুকুও পুড়ে গেছে আগুনে। আগুন নিভলেও গগনবিদারী কান্না থামেনি ফাতেমার। কারণ ৬০ ঘরের ভাড়া তোলা ফাতেমার এখন রাতে থাকার ঠাঁইটুকুও নেই।

রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৪টায় কড়াইল বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ১০টি ইউনিট। বিকেল ৫টা ৩৩ মিনিটে প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

ক্ষতিগ্রস্ত বস্তির বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অগ্নিকাণ্ডের সময় অধিকাংশ পুরুষ মানুষ ছিলেন বস্তির বাইরে। আকস্মিক আগুনে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন বস্তির নারী বাসিন্দারা। অনেকেই ঘর থেকে মালামালই বের করার সুযোগ পাননি।

ক্ষতিগ্রস্ত হান্নান মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগুনের সময় বস্তির পাশেই ছিলাম। হঠাৎ খবর পাই আগুনের। দৌড়ে এসে দেখি ঘর মালিকের পাশের ঘরে আগুন জ্বলছে। দ্রুতই সে আগুন ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে। দ্বিতীয় তলায় আমার ঘর। উপরে উঠতে পারিনি। ঘরের সবকিছু পুড়ে ছাই। আগুন নেভার পর ঘরে ঢুকে শুধু পানি আর ছাই চোখে পড়েছে।

বস্তির যে অংশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সেখানে ৬০টি ঘর ভাড়া দিতেন ফাতেমা বেগম। বস্তির ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, গগনবিদারী কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ফাতেমা। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভাইরে আমার সব শেষ। কিচ্ছু বাইর করতে পারি নাই। ঘরে ক্যাশ টাকা ছিল আড়াই লাখ। স্বর্ণালঙ্কারসহ আসবাবপত্র সব পুড়ে গেছে। বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে রাস্তায় দাঁড়াতে হবে ভাবিনি।

ফাতেমার স্বামী মুক্তার আলী পেশায় সরকারি একটি কার্যালয়ের ড্রাইভার। তার নিয়ন্ত্রণে ৬০ ঘর নির্মাণ করে ভাড়া থাকতো ৬০টি পরিবার।

মুক্তার আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, অফিসে ছিলাম। ফোনে আগুনের খবর পেয়ে অফিস থেকে দৌড়ে বস্তিতে আসি। ততক্ষণে আমার৷ কিছুই অবশিষ্ট নেই। পুড়ে গেছে সব।

মুক্তার বলেন, এর আগের আগুনে বেঁচে গেছি। অল্প দূরত্বেই আগুন জ্বলেছিল। ফায়ার সার্ভিস আর বাসিন্দাদের চেষ্টায় সেবার বেঁচে গেলেও এবার রক্ষে হলো না। আজ রাতে নিজেরই থাকার ঠাঁইটুকুও নেই।

মুক্তার বাড়ি নামে পরিচিত কড়াইল বস্তির ওই অংশের ভাড়াটিয়া ভোলার সদরুল মিয়া। তিনি বলেন, গত ১৮ বছর ধরে এই বস্তিতে থাকি। তিন বছর আগে আগুনে সব হারিয়ে স্থান বদলাই। এখানে আবারো সব গুছিয়ে নিয়েছিলাম। কিন্তু আগুনে আবারো সব হারালাম। ভোলার নদী ভাঙনে ভিটামাটি হারিয়েছি, ঢাকায় এসেও আগুনে সব হারাচ্ছি। কই যাবো কইতে পারেন? প্রশ্ন রাখেন সদরুল।

কড়াইল বস্তি যেন এখন মাসে মাসে আগুনে পোড়া দুঃস্বপ্নের নাম। এ বস্তিতে আগুন আতঙ্ক নিয়ে বসবাস ছিন্নমূল ও নিম্নবিত্তের মানুষের। গেলো বছর রাজধানীসহ সারাদেশে ১১৯টি বস্তিতে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এখানে শুধু কড়াইল বস্তিতেই আগুনের ঘটনা তিনবার। সর্বশেষ আজকের আগুনসহ এবছর দুইবার অগ্নিকাণ্ডের শিকার কড়াইল বস্তি।

আগুন নির্বাপণ শেষে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেনেন্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, কমপক্ষে অর্ধশত ঘর পুড়ে গেছে। এর মধ্যে ২০ টি ঘর পুরোপুরি পুড়ে গেছে। বাকিগুলো কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগুনের কারণ এখনো নিশ্চিত না। তদন্ত করে দেখা হবে। তদন্তের মাধ্যমে আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হবে।

জেইউ/এমজে