বাংলাদেশের তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, কারখানার উৎপাদন সরাসরি নির্ভর করে কর্মীদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার ওপর। তাই গার্মেন্টস কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সবচেয়ে জরুরি। তাদের স্বাস্থ্যের মানোন্নয়ন ও শিল্প-কারখানায় এগুলোর নিয়মিত অনুশীলনই পারে ভবিষ্যতে কোভিড-১৯ এর মতো অদৃশ্য মহামারী প্রতিরোধ করতে। 

বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) আয়াত এডুকেশন, দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বিজিএমইএ ও ইন্টেগ্রাল গ্লোবাল (আইজি) এর যৌথ উদ্যোগে রাজধানীর গুলশানের ক্রাউন প্লাজায় ‘শ্রমিকদের সুস্থতাকে শক্তিশালীকরণ ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। 

বিশ্বের সেরা ও সবচেয়ে বেশি সংখ্যক গ্রিন ফ্যাক্টরি বর্তমানে বাংলাদেশে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই চিত্রই বলে দেয় বিজিএমইএ’র নেতৃত্বে দেশের গার্মেন্টস খাতে কত ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। এখন আমরা গার্মেন্টস কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাকে আরও শক্তিশালীকরণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছি যাতে উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পায়, দেশের অর্থনীতির ভীত আরও শক্ত হয়।

আলোচনায় অনন্ত অ্যাপারেল্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির বলেন, আমাদের কারখানায় সার্বক্ষণিক চিকিৎসক ও নার্স রাখার পাশাপাশি কারখানায় কর্মরত কর্মীদের শরীরে পুষ্টি ও ক্যালোরি সঠিক পরিমাণে আছে কিনা সেদিকেও আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। তাছাড়া তাদের অনুপস্থিতির হার কমানো ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ওপর আমরা জোড় দিচ্ছি। 

জায়ান্ট গ্রুপের প্রকল্প সমন্বয়ক আশাফ হাসান বলেন, ছোট ও মাঝারি শিল্প-কারখানাগুলোকেও এই উদ্যোগে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কারণ সেখানে কর্মীদের সুস্থতা ও উৎপাদনশীলতা রক্ষণাবেক্ষণে মানসম্মত জনবলের ঘাটতি রয়েছে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইন্টেগ্রাল গ্লোবাল এর জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ জেনা বুটল্ফ। গোলটেবিল বৈঠক সঞ্চালনা করেন আয়াত এডুকেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নুসরাত আমান। 

এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অনন্ত অ্যাপারেল্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শরীফ জহির, জায়ান্ট গ্রুপের পরিচালক শারমিন হাসান, আমান স্পিনিং মিলের ভাইস চেয়ারম্যান তাহসিন আমান, জায়ান্ট গ্রুপের প্রকল্প সমন্বয়ক আশাফ হাসান প্রমুখ। 

উল্লেখ্য, দেশে বর্তমানে ২ হাজার ২০০ কারখানায় মোট ৪০ লাখ কর্মী যাদের মধ্যে ৬৫ ভাগ নারী শ্রমিক কাজ করছে। গার্মেন্টস কারখানাগুলোর কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে তাদের কর্মীদের উৎপাদনশীলতার উন্নতিসাধন, শিল্প-কারখানার টেকসই উন্নতি নিশ্চিতকরণ এবং মহামারি ও অপ্রত্যাশিত স্বাস্থ্য বিপর্যয় মোকাবিলায় কর্মীদের স্বাস্থ্য ও সুস্থতাকে শক্তিশালীকরণ ও এ ব্যাপারে তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা খুবই জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ। 

প্রাথমিকভাবে ইন্টেগ্রাল গ্লোবালের সহযোগিতায় আয়াত এডুকেশন বাংলাদেশের গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল মিলগুলোতে দ্রুত কোভিড ছড়িয়ে পড়ারোধে প্রাথমিক পর্যায়টি সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। যার ফলে রেডিমেড গার্মেন্টস সেক্টরের কর্মীদের ভ্যাকসিন কর্মসূচি ৭৭ ভাগ এ এবং সহযোগী কারখানাগুলোর প্রতিরক্ষামূলক কার্যক্রম ৮৫ ভাগ এ উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছে। যা নিশ্চিতভাবেই কারখানাগুলোকে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়া থেকে নিরাপদ রেখেছে এবং সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর মধ্যে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ দ্রুত হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে।

আয়াত এডুকেশন মূলত বাংলাদেশ ভিত্তিক একটি সামাজিক সংস্থা যারা গত পাঁচ বছর ধরে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও গার্মেন্টস কর্মীদের মধ্যে জীবনমান উন্নয়নে সচেতনতা তৈরির জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালন করে আসছে।

জেইউ/এমএ