আমার বাবাকে এরা মেরে ফেলেছে। ৫-১০ মিনিট সময় পেলে বাবাকে বাঁচাতে পারতাম। কিন্তু তারা আমাকে ঢুকতে দিল না। এভাবে বিলাপ করছিলেন আর কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের কোভিড আইসিইউতে মারা যাওয়া কাজী গোলাম মোস্তাফার মেয়ে কাজী রাবু।

বুধবার (১৭ মার্চ) সকালে ঢামেক হাসপাতালের নতুন ভবনের তৃতীয় তলায় করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য বরাদ্দ আইসিইউতে আগুন লাগার পর তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন- আবদুল্লাহ আল মাহমুদ (৪৮), কাজী গোলাম মোস্তফা (৬৬) ও কিশোর চন্দ্র রায় (৫৮)।

হাসপাতালে কাজী গোলাম মোস্তফার মেয়ে কাজী রাবু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমার বাবা কোভিড আক্রান্ত হয়ে ১১ তারিখে ভর্তি হলে ওইদিনই তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সকালে আগুন লাগার সময় আমি হাসপাতালেই ছিলাম। অনেকেই যার যার রোগী নিয়ে বের হয়ে যায়। কিন্তু আমার বাবাই শুধু বের হতে পারেনি। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আমার বাবাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে। বাবাকে সিসিইউতে নিলেও চিকিৎসকরা তাকে বাঁচাতে পারেননি। সবাই ভেতরে ঢুকে যার যার রোগী বের করে নিয়ে আসলেও আমাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আমাকে ঢুকতে দিলে বাবাকে আমি নিজেই নিয়ে আসতাম। কেন তারা আমাকে ঢুকতে দিল না। তারাই আমার বাবাকে মেরে ফেলছে।’

মৃত ব্যক্তির ছেলে কাজী মারুফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আপনারাই বলেন ১৩ জন রোগীকে বের করা হলো, শুধু আমার বাবাকেই বের করা গেল না। বের তারা ঠিকই করেছে, কিন্তু মৃত অবস্থায়। আমার বোনকে তারা ঢুকতে দিলে সে বাবাকে বের করতে পারত। তারা ইচ্ছে করেই আমার বোনকে ঢুকতে দেয়নি।’

গোলাম মোস্তফার শ্যালক জামান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমার ভাগনি এখানে সশরীরে হাজির ছিল। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে সে আইসিইউতে ছুটে যায়। চারদিক ধোঁয়ায় অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় কিছুই দেখা যায়নি। আগুনে অক্সিজেনের লাইন বন্ধ হয়ে যায়। যার যার স্বজন আইসিইউতে ছিল তারা নিজেরাই তাদের রোগীকে বের করেছে। এখানে ডিউটিতে যারা ছিল তারা আমার ভাগনিকে ঢুকতে দেয়নি। ৫-১০ মিনিট সময় পেলে আমার দুলাভাইকে বের করে আনতে পারত। এদের কারণেই আগুন লাগে, আবার এরাই মানুষ মেরে ফেলে।’

বুধবার সকাল ৮টা ১০ মিনিটের দিকে হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে চার সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স সদর দফতর।

জেডএস/এমএমজে