র‌্যাব হেফাজতে নওগাঁ ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের পরিচালক (যুগ্মসচিব) এনামুল হকের দায় আছে কি না, সে বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরইমধ্যে নওগাঁ জেলা প্রশাসক থেকে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট পাওয়া গেছে। অধিকতর তদন্তের জন্য রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। জানা গেছে, বৃহস্পতিবারের (৩০ মার্চ) মধ্যে এই প্রতিবেদন দেওয়ার কথা রয়েছে।

জানতে‌ চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্‌ উদ্দিন চৌধুরী বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা পোস্টকে বলেন,  নওগাঁ থেকে ঘটনার প্রাথমিক রিপোর্ট পেয়েছি। এনামুল হক যেহেতু রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কর্মরত, সেজন্য ওই অফিস থেকে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলেছি। আজকের মধ্যেই এ রিপোর্ট পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন >> র‍্যাবের হেফাজতে নারীর মৃত্যু

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তিনি কারো বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন‌ কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব জানান, সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে তদন্ত রিপোর্টের পর। তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা তদন্ত প্রতিবেদনের পর জানা যাবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় এনামূলের ভূমিকা নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। এতে প্রশাসন ক্যাডার বিব্রত। তাই প্রাথমিক শাস্তি হিসেবে আপাতত তাকে রাজশাহী বিভাগীয় অফিস থেকে প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিভাগীয় অফিসে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পরপরই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, এনামুল হকের বিরুদ্ধে এ ঘটনায় তার কতটুকু দায়, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ ব্যক্তিগত কাজে রাষ্ট্রীয় পদ-পদবি ব্যবহার, নিজ মন্ত্রণালয় বা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া একজন সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করে সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি লঙ্ঘন করার বিষয়টি তদন্ত করতে বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, তিনি (এনামুল হক) নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে নওগাঁর সদর উপজেলার ভূমি অফিসের অফিস সহকারী সুলতানা জেসমিনকে র‌্যাবের হাতে তুলে দেন। মামলা ছাড়াই জেসমিনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর র‌্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যু হয়। বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এমন বাস্তবতায় যুগ্মসচিব এনামুল হকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এদিকে এনামুল হকের ক্ষমতার অপব্যবহারসহ আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে তার বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন যুগ্মসচিব (মাঠ প্রশাসন) মন্ত্রণালয়ের শায়লা ফারজানা বুধবার গণমাধ্যমকে বলেন, এনামুল হক প্রথমত একজন নাগরিক। তারপর তিনি একজন সরকারি কর্মকর্তা। নাগরিক হিসাবে তিনি যেকোনো বিষয়ে অভিযোগ করতেই পারেন। তাতে আইনি কোনো বাধা নেই।

জেসমিনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তার (এনামুল হক) বিরুদ্ধে যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, তাই এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনাও হয়েছে। তার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বৃহস্পতিবার (আজ) তা জানা যাবে বলেও জানান তিনি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অপর একটি সূত্র জানায়, এনামুল হকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তও শুরু হচ্ছে। এজন্য পৃথক একটি তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। উচ্চ আদালত সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনাটি অধিকতর গুরুত্ব সহকারে আমলে নেওয়ায় মন্ত্রণালয়ও গুরুত্ব দিচ্ছে। একজন পদস্থ কর্মকর্তা জানান, আদালত থেকে কোনো ধরনের নির্দেশনা জারির আগেই মন্ত্রণালয় এনামুল হকের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে চায়।

অন্যদিকে র‌্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছে তার পরিবার,   মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। পাশাপাশি ঘটনার সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের দ্রুত চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করতে বলা হয়। এছাড়া ভুক্তভোগী পরিবারকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে ও যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিও জানানো হয়।

জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক (যুগ্মসচিব) এনামুল হক ব্যক্তিগত কাজেই নওগাঁ গিয়েছিলেন। তিনি এজন্য ঊর্ধ্বতন কারও অনুমতি নেননি।

উল্লেখ্য, গত ২২ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টায় নওগাঁ শহরের নওযোয়ান মাঠের সামনে থেকে সুলতানা জেসমিনকে আটক করে র‍্যাব। এরপর ২৪ মার্চ সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই নারীর মৃত্যু হয়। সুলতানা জেসমিন সদর উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সহকারী পদে চাকরি করতেন।

এনএম/জেডএস