গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে অনিয়মকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ১৫ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে সময় বেঁধে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে জেল-জরিমানার হুঁশিয়ার দিয়েছে কমিশন।

ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব মো. আতিয়ার রহমান জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। জানা গেছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশ প্রধান, শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

গত ১২ অক্টোবর অনুষ্ঠিত গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণের পর সিইসি প্রথমে ৫০টি কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা ঘোষণা করেন। এরপর রিটার্নিং কর্মকর্তাও একটি কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করেন। পরে ভোটগ্রহণের যৌক্তিকতা না থাকায় পুরো নির্বাচন বন্ধ করে দেয় ইসি। এরপর গঠিত তদন্ত কমিটি ৬৮৫ জনের শুনানি করে ব্যাপক অনিয়মের প্রমাণ পায় ওই ৫১ কেন্দ্রে।

এছাড়া অবশিষ্ট কেন্দ্রগুলোর সিসি ক্যামেরার ফুটেজও খতিয়ে দেখে অনিয়ম পায় তদন্ত কমিটি। পরবর্তীতে সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা, গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাসহ ১৩৩ জনের বিরুদ্ধে বরখাস্তসহ নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ আইন অনুসারে বিভিন্ন মেয়াদের শাস্তির সিদ্ধান্ত দেয় কমিশন। সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার পর তা অবহিত করার জন্যও সংশ্লিষ্ট নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষকে গত ২০ ডিসেম্বর নির্দেশনা দেয় নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষগুলো এখনো কোনো সাড়া না দেওয়ায় বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) হুঁশিয়ারি দিয়ে চিঠি দিয়েছে ইসি। এতে উল্লেখ করা হয়েছে– গাইবান্ধা-৫ শূন্য আসনের গত ১২ অক্টোবর নির্বাচনে ভোটগ্রহণকালে ভোটকেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়মের জন্য নির্বাচন কমিশন ওই নির্বাচন বন্ধ ঘোষণা করেন। নির্বাচনে কর্তব্যরত দায়ী ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও ভোটগ্রহণ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তা/কর্মচারীদের দায়িত্বপালনে অবহেলা তথা অসদাচরণের কারণে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা-৫ এর উপ-ধারা (১) এর বিধান মোতাবেক চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক পত্রপ্রাপ্তির এক মাসের মধ্যে গৃহীত কার্যধারা সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করার জন্য ২০ ডিসেম্বর পত্র প্রেরণ করা হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে এপর্যন্ত  উল্লিখিত ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ বা গৃহীত কার্যধারা সংক্রান্ত পত্র পাওয়া যায়নি।

এ অবস্থায় পত্রপ্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে দায়ী ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের জন্য বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ পূর্বক গৃহীত কার্যধারা সম্পর্কে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে অবহিত করার জন্য নির্দেশক্রমে পুনঃঅনুরোধ করা হলো। অন্যথায় নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১ এর ধারা-৬ এর উপ-ধারা (২) এর বিধান মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক হবে।

নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইনের ৬(২) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি ইসির আদেশ না পালন করলে এবং ইসিকে সে সম্পর্কে অবহিত না করলে তিনি অনধিক ছয় মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন অথবা অনধিক দুই হাজার টাকা অর্থদণ্ডে অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

এসআর/এসএসএইচ/