মিয়ানমারের জন্য নির্ধারিত স্থান ফাঁকা রেখেই শেষ হয় অধিবেশন/ ছবি : ঢাকা পোস্ট

ঢাকায় তিন দিনব্যাপী ইউনেস্কোর ইন্টারগভর্নমেন্টাল ওশনোগ্রাফিক কমিশনের রিজিওনাল কমিটি ফর দ্য সেন্ট্রাল ইন্ডিয়ান ওশানের (আইওসিআইএনডিআইও) ৯ম সভা বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) শেষ হয়েছে। সভায় আইওসিআইএনডিআইওর সদস্য রাষ্ট্র মিয়ানমারের চেয়ার ফাঁকাই ছিল। অথচ সভা শুরুর আগে ঢাকায় প্রতিনিধিদল পাঠানোর বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নিশ্চিত করেছিল দেশটি।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আইওসিআইএনডিআইওর সভার যোগ দিতে নেইপিদোকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ঢাকা। ঢাকার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিল দেশটি। সভায় যোগ দেবে মর্মে তিন প্রতিনিধিদলের তালিকাও পাঠিয়েছিল মিয়ানমার। শুধু তাই নয়, প্রতিনিধিদলের ফ্লাইট প্ল্যান পাঠানো হয়েছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সেজন্য সভায় মিয়ানমারের জন্য নির্ধারিত আসনও বরাদ্দ রাখা হয়েছিল।

মিয়ানমার ছাড়াও আইওসিআইএনডিআইওর আরও তিন সদস্য রাষ্ট্র যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব ও ওমানও সভায় কোনো প্রতিনিধিদল পাঠায়নি।

আরও পড়ুন : অস্থির সময়ে কূটনীতিতে ভারসাম্যের কৌশলে থাকবে সরকার

প্রতিনিধিদলের তালিকা পাঠানো এবং ফ্লাইট প্ল্যান পাঠানোর পরও মিয়ানমারের সভায় যোগ না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে সভার সভাপতি পররাষ্ট্র-সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা মিয়ানমারকে দাওয়াত দিয়েছিলাম। তাদের না আসার কারণ হয়ত একটাই, হয়ত সমুদ্র সংক্রান্ত সায়েন্টিফিক লোকজন নেই। আমাদেরও কিন্তু নেই। এখানে অংশগ্রহণ করে তারা কী করবে? সাধারণ লোকজন পাঠিয়ে-তো লাভ নেই।

তবে সভায় মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল যোগ দিলে সেটি বাংলাদেশের জন্য সুফল হতো বলে মনে করছেন খুরশেদ আলম।

বাকি তিন সদস্য যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব ও ওমানের না আসার কারণ হিসেবে মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্সের সচিব জানান, দেশগুলোর অন্য কমিটমেন্ট ছিল। তাই তারা আসতে পারেনি।

ফের আইওসিআইএনডিআইওর চেয়ার বাংলাদেশ

গত বছর ইউনেস্কোর ইন্টারগভর্নমেন্টাল ওশনোগ্রাফিক কমিশনের রিজিওনাল কমিটি ফর দ্য সেন্ট্রাল ইন্ডিয়ান ওশানের চেয়ার নির্বাচিত হয়েছিল বাংলাদেশ। নির্বাচনের মাধ্যমে আইওসিআইএনডিআইওর চেয়ার হন পররাষ্ট্র-সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম। এবারও খুরশেদ আলম চেয়ার নির্বাচিত হয়েছেন।

আরও পড়ুন : চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দূতদের প্রস্তুত থাকার বার্তা দেবে ঢাকা

এ প্রসঙ্গে খুরশেদ আলম বলেন, টানা দুইবার আমরা আইওসিআইএনডিআইওর চেয়ার নির্বাচিত হয়েছি। গতবার নির্বাচনের মাধ্যমে আমি চেয়ার নির্বাচিত হই। এবারও নির্বাচন হয়েছে। অন্য কেউ এবার দাঁড়ায়নি। তাই আমরা রি-ইলেক্টেড হয়েছি।

চেয়ার হিসেবে বাংলাদেশের জন্য কী ধরনের অবদান রাখতে চান, এমন প্রশ্নের জবাবে মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্সের সচিব বলেন, আমাদের যে সমুদ্র আছে সেটাকে আমরা কীভাবে কাজে লাগাতে পারি সে বিষয়টি খতিয়ে দেখব। আমাদের ইচ্ছে হলো যে, সায়েন্টিফিক্যালি পানির নিচে কী আছে বা যে সম্পদ আছে সেটা রক্ষা করা যায় কিনা, তা বিশ্লেষণ করে দেখা।

আরও পড়ুন : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনে ওয়াশিংটনকে আশ্বস্ত করেছে ঢাকা

সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় বাংলাদেশ এখনও পিছিয়ে উল্লেখ করে খুরশেদ আলম বলেন, আমাদের সমুদ্র আমরা কিন্তু ব্যবহার করতে পারছি না। সমুদ্র একটিভিটিতে আমরা এখনও পিছিয়ে, একদমই পিছিয়ে।  

আইওসিআইএনডিআইওর সভা থেকে কী পেতে পারে বাংলাদেশ

আইওসিআইএনডিআইওর ৯ম সভায় ১৮টি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেসহ ১৪টি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল যোগ দিয়েছেন। তিন দিনব্যাপী এ সভা থেকে বাংলাদেশ কীভাবে লাভবান হতে পারে জানতে চাওয়া হয় সভার সভাপতি খুরশেদ আলমের কাছে।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা বৈধভাবে সাগরে জমি পেয়েছি। তারপরে বঙ্গোপসাগর আছে, ইন্ডিয়ান ওশান আছে। কিন্তু আমাদেরটা আমরা ব্যবহার করতে পারছি না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে, এর সায়েন্টিফিক কারণটা কী? সাইক্লোন হচ্ছে, এর সায়েন্টিফিক কারণটা কী? সাইক্লোনের পরে কী ইফেক্ট হচ্ছে, তার সায়েন্টিফিক এভিডিয়েন্স কী? কোস্ট ইরোশন হচ্ছে, এর সায়েন্টিফিক কারণটা কী আমাদের জানা দরকার।

আরও পড়ুন : মিয়ানমার সফর বাতিল, সংকট অর্থ না ব্যবস্থাপনার?

খুরশেদ আলম বলেন, সারা বিশ্বে সমুদ্র পর্যবেক্ষণ করা হয়। আমরা করি না। আমাদের কিছুই নেই। এসব জায়গায় আমরা যেন সাহায্য পেতে পারি, সেজন্য ঢাকায় এ সভার আয়োজন করা হয়েছে। প্যারিস থেকে দুজন আসছে। তারা আমাদের তথ্য-উপাত্ত দেখেছে। এটাতে তারা আমাদের কীভাবে সাহায্য করতে পারবে সেটা তারা দেখবে।

এনআই/এসকেডি