বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িতদের চিহ্নিতে সংসদ কমিশন গঠন করতে পারেনি
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেছেন, এই সংসদের অনেক অর্জন আছে, তবে দুর্বল দিকও আছে। আজ পর্যন্ত এই সংসদ বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন করতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার বিষয় ছিল একটি বড় ষড়যন্ত্রের কাজ। ফারুখ-রশিদ যে হত্যা করল এখানেই শেষ নয়। এর পেছনে বড় ষড়যন্ত্র ছিল। চরম ডানপন্থি এবং বামপন্থি তারা সবাই এখন উঠে গেছে আপনাদের নৌকায়। কারণ আর ৯ মাস বাকি আছে নির্বাচনের।
রোববার (৯ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের সুর্বণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদে আনীত প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে ফিরোজ রশিদ এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন অধিবেশনের সভাপতিত্ব করেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ‘আমরা আইন প্রণয়ন করি। সংসদে আইন প্রণয়নের সময় আমরা কতজন উপস্থিত থাকি? আইন পাস করার সময় সবাই তো সংসদে থাকে না। আমলারা আইন ড্রাফট করে দেয়, আমরা হ্যাঁ, না বলে পাস করে দেই। এজন্য রাষ্ট্রপতি তার ভাষণে বলেছেন, একসময় বাইরে থেকে আইন প্রণয়ন করতে কনসালটেন্ট আনতে হবে। কারণ আমাদের মধ্যে আইন প্রণয়ন করার মতো কেউ থাকবে না।’
ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্রে কোনো কাজ হয় না। যদি পেটে ভাত, শিক্ষা-চিকিৎসা-বাসস্থানের অবস্থা না থাকে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিশাল ক্ষমতাধর। বিশ্বের ইতিহাসে এত ক্ষমতাবান প্রধানমন্ত্রী আছে কি না তা আমার জানা নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ এক এক করে জাতির পিতার সমস্ত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। এটা তার জীবনের বড় সাফল্য।’
বিজ্ঞাপন
‘বঙ্গবন্ধু একদিনে বঙ্গবন্ধু হননি। তার জীবনের বেশি সময় কেটেছে জেলে। তিনি ঢাকায় বসে নেতৃত্ব দেননি। তিনি প্রত্যেকটি অঞ্চলে গিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আজ কিন্তু আমরা ঘরের বাইরে যাই না। কাঁচের দেয়ালে বসে নেতৃত্ব দেই। আর যারা আসে তাদের আমাদের লোকজন কোরবানির গরুর মতো, গলায় মালা দিয়ে রুমে নিয়ে বসান। আর টাকার বস্তা দিলে মনোনয়ন দেন। এটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের আরেকটি দুর্বল দিক’, বলেন জাতীয় পার্টির এই নেতা।
তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্টের পর বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদ করতে কাউকে দেখিনি। এ কথা আমার নয়। আওয়ামী লীগের নেতাদেরই কথা। আর আমি তখন তরুণ। আমরা ঢাকায় ছিলাম, আমরাও প্রস্তুত ছিলাম। নেতৃত্বের অভাবে আমরা সামনে এগোতে পারিনি। আমাদের কেউ ডাক দেয়নি, এটি ইতিহাস।’
‘বলা হচ্ছে প্রত্যেকটি সিটে নৌকা প্রতীক দেওয়া হবে। জাতীয় পার্টির ২৬টি আসনেও লাঙল দেবেন না, সেখানেও নৌকা দেবেন। আমাদের ভয় পান কেন? প্রয়োজনে সব সিট আপনাদের ছেড়ে দেব।’
সরকারকে উদ্দেশ্যে করে কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘শান্তভাবে দেশ পরিচালনা করুন। নির্বাচনের বাকি আর ৯ মাস। একটি বড় রাজনৈতিক দল বলে দিয়েছে, তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না। তাই সতর্ক হোন, সামনে কিন্তু বড় বিপদ আসছে।’
সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেননের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের পাশে কেউ বলছেন সংবিধানে সংশোধনী আনতে হবে। বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম রাখা যাবে না। রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখা যাবে না। কারণ এসব সাংঘর্ষিক। এখন আপনারা এগুলো বলছেন কেন? আর মাত্র ৯ মাস বাকি নির্বাচনের। এই মুহূর্তে আরেকটি নতুন ইস্যু সৃষ্টি করতে যাচ্ছেন কেন? এর উদ্দেশ্য কি? আপনারা তো সহি সালামতে নৌকায় উঠে বসে গেছেন। নৌকার কাণ্ডারি শেখ হাসিনা, নৌকা টানছেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনাকেই নৌকা বেয়ে ওপারে যেতে হবে। আপনারা তো নিশ্চিতভাবে নৌকায় উঠে বসে আছেন।’
কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘আবার বাবা আওয়ামী লীগের গোপালগঞ্জের সভাপতি ছিলেন। আমি ১৯৭৩ সালে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, জিল্লুর রহমান, ওবায়দুর রহমান সাহেব আমাকে ডেকে বললেন, তোমাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। কিন্তু পরে আমি মনোনয়ন পাইনি। কেন মনোনয়ন দেওয়া হয়নি সেজন্য আমাকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। এরপরও মনোনয়ন চেয়েছিলাম মনোনয়ন পাইনি। আর চিঠি দিয়েও জানানো হয়নি। তখন বুঝলাম আগের আওয়ামী লীগ বদলে গেছে।’
আক্ষেপ করে জাতীয় পার্টির এই নেতা আরও বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগ, যুবলীগ করেছি। আমার দোষ ঘর ছেড়েছি, ঘর কি আমি ছাড়ছি? ঘর থেকে আপনারা বের করে দেবেন, আর আমি গাছ তলায় বসে থাকব, এই তো আমাদের নিয়তি। ইতিহাস বলেন, ইতিহাস আমিও বলতে পারি।’
ওএফএ/এসএসএইচ/