আমি মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যর্থ অভিভাবক : সচিব
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা মিয়া বলেছেন, আমি মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যর্থ অভিভাবক। যা কিছু করতে যাই নেগেটিভ আসে।
রোববার (৯ এপ্রিল) মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে মো. শাহজাহান কবীরের (বীর প্রতীক) লেখা ‘খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা’ বইয়ের দ্বিতীয় খণ্ডের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে সচিব এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ‘আপনারা বলছেন, আমি মুক্তিযোদ্ধাদের অভিভাবক। আমি একজন ব্যর্থ অভিভাবক। এজন্য বলি, মাত্র কয়েকদিন আগে আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যা চেয়েছি নেগেটিভ হয়ে যায়।’
খাজা মিয়া বলেন, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রস্তাব পাঠাই। একটা ওপেন মিটিংয়ে আমার মোবাইলে রেকর্ড আছে, রীতিমতো বলেছে যে, বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসের জন্য আলাদা ভাতা প্রয়োজন কী? কারণ এ দুটো দিবস… আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি স্বাধীন হয়েছি এটা-সেটা এজন্য আর আলাদা ভাতার প্রয়োজন কী?’
বিজ্ঞাপন
‘অর্থ সচিব নিজে বলেছেন, জুম মিটিংয়ে, রেকর্ডেড, তিনটি প্রস্তাব দিয়েছিলাম তিনটি প্রস্তাবই নেগেটিভ। কী জন্য? বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে। আমি বললাম, আমার মনে হয় মুক্তিযোদ্ধারা যদি জীবন স্যাক্রিফাইস করতে পারেন, সামান্য কয়টা টাকা যদি দেশের প্রয়োজন হয়, স্যাক্রিফাইস করতে পারবেন।’
তিনি বলেন, ‘এ ধরনের অবস্থা। এজন্য আমি বলেছি, অভিভাবক বলেছেন ঠিকই, কিন্তু ব্যর্থ অভিভাবক। যা কিছু করতে যাই নেগেটিভ আসে।’
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, ‘এজন্য আমার অতিরিক্ত সচিব বলেছেন আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু সাহস করে বলতে পারছেন না, সীমাবদ্ধতাটা কোথায়? আমরা টাকা চাইলে টাকা পাই না। এ বইটা আমরা ছাপতে পারতাম। টাকাটা আমাদের মন্ত্রণালয়ের না, সরকারের কোষাগার থেকে আমাকে আনতে হয়। এগুলো চাইলে বৈশ্বিক পরিস্থিতি, এটা-সেটা নানা কথাবার্তা বলে নেগেটিভ করা হয়।’
স্বাধীনতা দিবসে প্রকাশিত একটি খবরের প্রতি ইঙ্গিত করে সচিব বলেন, ‘গত ২৬ মার্চ সম্পূর্ণ একটি জালিয়াতি হলো। অন্য একজন ব্যক্তির ছবির সঙ্গে আরেকজনের বক্তব্য মিলাইয়া দিয়ে ২৬ মার্চের দিনই বলা হচ্ছে যে, আমাদের স্বাধীনতার কী প্রয়োজন… স্বাধীনতা দিয়ে কী করবো? কয়দিন আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছিলেন, আমরা পাকিস্তান আমলে ভালো ছিলাম, তার মানে স্বাধীনতার তো আমাদের প্রয়োজন ছিল না। এ দুটি ঘটনাকে আমরা মিলাতে পারি।’
‘একদিকে বলছে আমি পাকিস্তান আমলে ভালো ছিলাম। আরেকজন বলছে যে, এ স্বাধীনতা দিয়ে কী হবে। দুটো মিলে যাচ্ছে না? আমরা আগে ভালো ছিলাম, (নিউজটা) ওটাকেই সমর্থন করা।’
সচিবের বক্তব্যের পর খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুব এলাহী রনজু (বীর প্রতীক) বলেন, ‘আমরা খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষুদ্র সংগঠনটির নেতৃত্ব দেওয়ার চেষ্টা করি। আমরা যারা (অর্থ বিভাগে) গিয়েছি, আমরা খুব বেদনাহত তাদের ব্যবহারে। বেদনাহত মনোরথ নিয়েই আমরা বিভিন্ন সময় তাদের ওখান থেকে ফিরেছি। এমনকি দেখা গেল অনেক সময় আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎটা করতে তারা নারাজ। আমরা কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়েই গিয়েছি। যাই হোক সবকিছু মিলিয়ে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, জাতি এগিয়ে যাচ্ছে, সবাই এগিয়ে যাক।’
এমএম/এসএসএইচ/