#একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করছিলেন মিতু

#একাধিকবার বাবার বাড়িতে চলে যেতে চেয়েছিলেন মিতু

# শুধু গায়ত্রী নয়, একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল বাবুল আক্তারের, পরের সাক্ষীতে এসব তথ্য উঠে আসবে : মহানগর পিপি

#মিতুর বাবার কথা কারও শেখানো কি না বুঝতে পারছি না : বাবুল আক্তারের আইনজীবী

পরকীয়ার কারণে সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার ও তার স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে কলহ লেগেই ছিল। বিষয়টি নিয়ে চরম আকার ধারণ করলে মিতু কয়েকবার বাবার বাড়িতে চলে যেতে চেয়েছিলেন এবং একবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন। কলহপূর্ণ দাম্পত্য জীবনের একপর্যায়ে স্ত্রী মিতুকে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে খুন করান বাবুল আক্তার। নাটক সাজাতে হত্যাকাণ্ডের দিন নিজে অবস্থান করেন ঢাকায়।

নিজের মেয়ে মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডে দায়ের হওয়া মামলায় আদালতে দেওয়া সাক্ষীতে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন এমন তথ্য জানান। 

রোববার (৯ এপ্রিল) তৃতীয় চট্টগ্রাম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালতে তিনি আংশিক সাক্ষ্য দেন। মামলার পরের ধার্য তারিখে তিনি বাকি সাক্ষ্য দেবেন। ওইদিন ভিনদেশি নারী গায়ত্রী ছাড়াও বাবুল আক্তারের একাধিক প্রেমের সম্পর্কের তথ্য আদালতকে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আব্দুর রশিদ।

তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আলোচিত মামলাটির বাদী ছিলেন বাবুল আক্তার। তবে তিনি প্রধান আসামি হওয়ায় বাদী হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন মোশাররফ হোসেন। তিনি বিরতি দিয়ে দুই দফা আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তার মূল কথা হলো- বাবুল আক্তার নিজে তার স্ত্রীকে হত্যার যাবতীয় পরিকল্পনা করেছে। ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী ঠিক করে তিনি ঢাকায় অবস্থান করে স্ত্রীকে হত্যা করিয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কারণ পরকীয়া। মিতুর বাবা আজকে একজন নারীর প্রেমের কথা বলেছেন। তার সাক্ষ্য বাকি আছে। বাবুলের জীবনে একাধিক নারীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক ছিল। সেগুলো মিতুর বাবার পরবর্তী সাক্ষ্যতে উঠে আসবে। 

পরকীয়ার কারণে হত্যাকাণ্ডের আগে থেকে মিতুর সঙ্গে বাবুল আক্তারের টানাপড়েন সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কলহ লেগেই ছিল। বিষয়টি নিয়ে মিতু অনেকবার বাসা থেকে চলে যেতে চেয়েছিলেন। একবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলেন। একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে কলহের সঙ্গে চরম আকার ধারণ করে। এ নিয়ে বাবুল আক্তার মিতুকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন।

এদিন বাবুল আক্তারের পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট গোলাম মওলা মুরাদ। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, চার্জ গঠনের বিষয়ে আমরা উচ্চ আদালতে রিভিশন করেছি। আদালতকে আমরা বিষয়টি অবহিত করে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য স্থগিত রাখার আবেদন করি। কিন্তু আদালত আবেদন নাকচ করে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করে। 

তিনি আরও বলেন, মিতু হত্যাকাণ্ডের পর তার বাবা মোশাররফ প্রথমে গোয়েন্দা পুলিশকে ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে কিছুই বলেননি। এখন নতুন নতুন কথা বলছেন। এটি কারও শেখানো কথা কি না বুঝতে পারছি না।

আজ (রোববার) মিতু হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। মামলাটির সাত আসামির মধ্যে বাবুল আক্তার, মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন ও শাহজাহান মিয়াসহ চারজন কারাগারে রয়েছেন। তাদের আদালতে হাজির করা হয়। আরেক আসামি এহতেশামুল হক ভোলা জামিনে রয়েছেন। তিনিও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বাকি দুই আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা ও খায়রুল ইসলাম ওরফে কালু মামলার শুরু থেকেই পলাতক।

এদিকে রোববার সাক্ষ্যগ্রহণের শুরুতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে একটি আবেদন করার কথা জানিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য সময় চান। তবে রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরোধিতা করে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করার দাবি জানান। শুনানি শেষে আদালত সাক্ষ্যগ্রহণ শুরুর আদেশ দেন। এরপর বিরতি দিয়ে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেনের দুই দফা সাক্ষী নেওয়া হয়।

এর আগে গত ১৩ মার্চ আলোচিত মামলাটিতে বাবুল আক্তারসহ সাত আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।

জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় ঘটনাটি দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে তৎকালীন পুলিশ সুপার ও মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।

তবে মামলাটিতে স্ত্রী হত্যাকাণ্ডে স্বামী বাবুল আক্তারেরই সম্পৃক্ততা পায় পিবিআই। ২০২১ সালের ১২ মে আগের মামলাটিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। একই দিন বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানায় দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন। ওইদিনই মামলাটিতে বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করে পিবিআই। সেই থেকে কারাগারে রয়েছেন বাবুল।

এদিকে, প্রথম মামলায় পিবিআইয়ের দেওয়া চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১৪ অক্টোবর নারাজির আবেদন করেন বাবুলের আইনজীবী। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ৩ নভেম্বর নারাজি ও পিবিআইয়ের প্রতিবেদন খারিজ করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন। এরপর দুটি মামলাই তদন্ত করতে থাকে পিবিআই। তবে পরবর্তী সময়ে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গত বছরের ২৫ জানুয়ারি মিতুর বাবার দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এরপর একই বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর প্রথম মামলাটি অধিকতর তদন্ত শেষে বাবুলসহ ৭ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।

এমআর/এসএম