দুর্ঘটনার পর খুব তড়িঘড়ি করে সদ্য আমদানি করা কোরিয়ান কোচ দিয়ে রেক সাজিয়ে ‘সোনার বাংলা এক্সপ্রেস’ ট্রেন চলাচল শুরু করেছিল। কিন্তু পঞ্চম ট্রিপ শেষে ষষ্ঠ ট্রিপে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে কমলাপুর স্টেশনে আটকে গেছে কোরিয়ান কোচের রেক।

বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) সকাল ৭টায় সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ঢাকা স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ৯টা ৫ মিনিটে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সেটি ঢাকা স্টেশন ছেড়ে যেতে পারেনি।

কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভ্যাকুয়ামের মাধ্যমে ট্রেনের ব্রেকিং সিস্টেম কাজ করে। রেকে লোকোমোটিভ সংযোজনের পর ভ্যাকুয়াম প্রেসার দিলে সেটি কাজ করছে না। ভ্যাকুয়াম লাইনে কোথাও লিকেজ আছে বলে ধারণা করছেন তারা।

এই ঘটনার পর বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) মো. জাহাঙ্গীর আলম, প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী (পূর্ব) তাপস কুমার দাস, জুনিয়র বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (পূর্ব) বোরহান উদ্দিন, কোচ সংগ্রহ প্রকল্পের বর্তমান প্রকল্প পরিচালক পার্থ সরকার, ঢাকা বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সফিকুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত আছেন।

তারা জানিয়েছেন, মূলত ট্রেনের কোচের ব্রেকিং সিস্টেম সচল রাখতে ভেকুয়াম প্রেসার ৫ প্রয়োজন হয়। কিন্তু কোনভাবেই সেই প্রেসার রেট ২.৫ এর ওপরে উঠছে না। শুরুতে ৩ হাজার সিরিজের একটি লোকোমোটিভ ব্যবহার করলে সেটি ঠিকঠাক কাজ করছিল না। পরে সেটি পরিবর্তন করে ২৯১৫ নম্বর লোকোমোটিভ ব্যবহার করলে ভ্যাকুয়াম প্রেসার ৪ পর্যন্ত উঠেছে। কিন্তু এটি নিয়েও রেক চালানো সম্ভব না। এতে ব্রেক ফেল হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

কয়েকদিন আগে একটি দুর্ঘটনায় ৭ কোচের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং নতুন রেক দিয়ে চালুর পর ভেকুয়াম জটিলতায় ৩ ঘণ্টা বিলম্ব হওয়াতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন যাত্রীরা। তারা বলছেন, সামান্য একটা হাইড্রলিক সমস্যা সমাধান করতে পারছে না। রেলের এতো এতো ইঞ্জিনিয়ার কোথায়?

একটি বেসরকারি গ্রুপ অব প্রতিষ্ঠানের জিএম মোহাম্মদ ফিরোজ আলম যাত্রী হয়েছেন এই সোনার বাংলা এক্সপ্রেসে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি রাজশাহীতে কাজ করি। আমাকে অনেক সিডিউল মেইনটেইন করে চলতে হয়। আজ ভোরে রাজশাহী থেকে ঢাকায় এসেছি। কানেক্টিং ট্রেন হিসেবে আমি সোনার বাংলার যাত্রী। ওখান থেকে আমার অন্য কানেক্টিং আছে।

তিনি আরও বলেন, এটা তো সাধারণ কোনও যাত্রা না। এটা ঈদযাত্রা। সব মানুষেরই নিজস্ব সিডিউল আছে। সামান্য একটা হাইড্রলিক সমস্যা সমাধান করতে পারছে না। একটা ইঞ্জিন চেক অনেক ইঞ্জিনিয়ার যান। এখন ওই সমস্ত ইঞ্জিনিয়ার কই?

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সোনার বাংলা এক্সপ্রেসে এগুলো নতুন কোচ। আমাদের ইঞ্জিনিয়ারদের ট্রেনিংটা এখনও ঠিকভাবে হয়নি। আমরা আশা করবো এটি অল্প সময়ের মধ্যে ঢাকা ছেড়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, এই কোচে নতুন টেকনোলজি রয়েছে। আমাদের লোকজন যেসব যন্ত্রপাতি দিয়ে কাজ করে, এটাতে এগুলো ডিফারেন্ট। আমাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা আছে। কোনও নতুন কিছু চললে প্রথমে অনেকগুলো সমস্যা বের হয়। এটা একমাস, দুইমাস চললে ঠিক হয়ে যাবে।

আপডেট : সর্বশেষ ৩ ঘণ্টা ২৭ মিনিট বিলম্বে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ১০টা ২৭ মিনিটে ঢাকা স্টেশন ছেড়ে যায়।

চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটের বিরতিহীন সোনার বাংলা এক্সপ্রেস (৭৮৭) ট্রেন গত ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের হাসানপুর রেলওয়ে স্টেশনে দুর্ঘটনায় পড়ে। এতে ট্রেনের ১৪টি কোচের মধ্যে ৭টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ঈদে যাত্রী পরিবহনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমদানি করা নতুন কোরিয়ান কোচ দিয়ে তড়িঘড়ি করে রেক সাজিয়ে ‘সোনার বাংলা এক্সপ্রেস’ চালু শুরু করে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

জানা গেছে, নতুন রেকের কোচে রয়েছে অটোমেটিক স্লাইডিং ডোর, স্বয়ংক্রিয় এয়ার ব্রেক, আরামদায়ক সিট, বায়ো টয়লেট, টয়লেটের বাইরে আলাদা বেসিন, প্রতিটি সিটের পাশে ইউএসবি পোর্টসহ বৈদ্যুতিক সকেট, জরুরি হ্যামার, আধুনিক শব্দহীন বৈদ্যুতিক ফ্যান, সিসি ক্যামেরাসহ আরও নতুন কিছু প্রযুক্তি।

এমএইচএন/এসএম