প্রাণীর সঙ্গে মানুষের সখ্য গড়ার অনন্য উদাহরণ তৈরি করেছেন জাতীয় চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়ক নূরে আলম। ৪০ বছরের চাকরিজীবনের বেশিরভাগ সময়ই কাটিয়েছেন জলহস্তীদের সঙ্গে। স্বভাবগতভাবে জলহস্তী হিংস্র প্রাণী হলেও তত্ত্বাবধায়ক নূরে আলমের সামনে যেন হিংস্রতার লেশমাত্র থাকে না জলহস্তীদের মধ্যে। 

পরিচিত কণ্ঠের ডাকে যেকোনো মুহূর্তে ছুটে আসে জল থেকে স্থলে। দুরন্ত, ডায়না, টিটু, জলপরী, আগন্তুক- এমন সুন্দর সুন্দর নাম রয়েছে জাতীয় চিড়িয়াখানায় থাকা জলহস্তীদের। ১৯৮৩ সালে সর্বপ্রথম কেনিয়া থেকে জাতীয় চিড়িয়াখানায় আনা হয় একটি পুরুষ জলহস্তী। ৮৯ সালে আফ্রিকা থেকে আনা হয় আরেকটি নারী জলহস্তী। 

জাতীয় চিড়িয়াখানায় জলহস্তী ছিল ১৭টি। মিরপুর থেকে ইতোমধ্যেই  দুই জোড়া জলহস্তী স্থানান্তর করা হয়েছে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে। কুয়েতেও পাঠানো হয়েছে একটি জলহস্তী। এছাড়া চট্টগ্রাম ও রংপুর চিড়িয়াখানায় জলহস্তী স্থানান্তর করা হয় মিরপুর চিড়িয়াখানা থেকে। এখন জাতীয় চিড়িয়াখানায় রয়েছে মোট ১৩টি জলহস্তী।

আরও পড়ুন : নিম্নমানের সেই ১০ ইঞ্জিন গ্রহণ করল রেলওয়ে!

কথা হয় জলহস্তীর সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটানো তত্ত্বাবধায়ক নূরে আলমের সঙ্গে। তিনি জানান, জলহস্তীরাই এখন তার প্রিয় বন্ধু, তার ভাষা বুঝতে পারে বিশালদেহী এই প্রাণীগুলো। লকডাউনের সময় যখন চিড়িয়াখানা বন্ধ ছিল তখনও জলহস্তীদের না দেখে থাকতে পারতেন না তিনি। জলহস্তীগুলোও আশায় থাকত নূরে আলমের সাক্ষাতের। তাই লকডাউনের সময়েও কখনো হেঁটে কখনো বা রিকশায় জলহস্তীদের কাছে ছুটে আসতেন নূরে আলম।

জলহস্তীদের নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা খুব প্রখর। তাদের সঙ্গে মিশতে গিয়ে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় নূরে আলম জানান, হঠাৎ করেই কোনো মানুষ জলহস্তীদের কাছে যেতে পারবে না। তবে নূরে আলমের দেওয়া শিক্ষায় মিরপুর চিড়িয়াখানায় থাকা জলহস্তীদের হিংস্রতা কমে গেছে কয়েকগুণ। চিড়িয়াখানায় আগত দর্শনার্থীদের দেখলেও এখন আর স্বভাবগত হিংস্রতা দেখায় না জলহস্তীগুলো। তবে, বাচ্চা দেওয়ার সময়টায় জলহস্তীদের আচরণে একটু ভিন্নতা আসে। সে সময়ে তাদের কাছ থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখতে হয় বলে জানান নূরে আলম। 

জাতীয় চিড়িয়াখানায় জলহস্তীদের বেড়ে ওঠার জন্য তৈরি করা হয়েছে অনুকূল পরিবেশ। তবে দর্শনার্থীদের কাছে আরও নান্দনিকভাবে জলহস্তীদের উপস্থাপন করতে আরও বড় পরিসরের জায়গায় জলহস্তীদের রাখার কথা ভাবছে কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন : সওজের প্রকৌশলীর স্ত্রীর এত সম্পদ!

বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম স্তন্যপায়ী প্রাণী জলহস্তী। আফ্রিকার সাব-সাহারান প্রদেশে এদের মূল অবস্থান। এরা মূলত তৃণভোজী প্রাণী। এদের আয়ুষ্কাল ৪০ বছর। সাধারণত ছয় থেকে সাত বছর বয়সে বয়ঃপ্রাপ্ত হয়। আট থেকে নয় মাস পেটে ধারণ করার পর এরা বাচ্চা প্রসব করে। জলহস্তীর শরীর থেকে রক্তের মতো ঘাম বের হয়। এটি যা সূর্যের আলো প্রতিরোধ করে এবং জীবাণু থেকে জলহস্তীকে রক্ষা করে। এরা স্থলে ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার বেগে দৌড়াতে সক্ষম। দিনে জলে আর রাতে ডাঙায় থাকতে পছন্দ করে জলহস্তী। এরা খুবই হিংস্র স্বভাবের প্রাণী।

আফ্রিকার বিভিন্ন নদ ও হ্রদে জলহস্তীর বসবাস। এদের ওজন দেড় থেকে আড়াই টন পর্যন্ত হতে পারে। দেড় থেকে চার মিটার উচ্চতার এ প্রাণীর মুখে বড় দুটি দাঁত থাকে। খাবারের সময় জলহস্তী ডাঙায় উঠে আসে। এর অন্য নাম রিভার হর্স। গরমের মৌসুমে বেশিরভাগ সময় জলাশয়ে ও শীতের মৌসুমে স্থলে থাকতে পছন্দ করে জলহস্তী।

এসআর/এইচকে