ডা. সাইফুল ইসলাম রাজধানীর শান্তিনগরে বাবা-মার সঙ্গে থাকেন। তিনি ঢাকার পান্থপথের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের চিকিৎসক। জরুরি বিভাগের দায়িত্ব পালনে তাকে সকাল সাড়ে ৭টায় বাসা থেকে বের হতে হয়। ঢাকায় থাকার পরও বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে না পারায় মন খারাপ তার।

জরুরি বিভাগে ঢাকা পোস্টের সঙ্গে কথা হয় চিকিৎসক সাইফুলের। তিনি বলেন, পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে না পারা কিংবা এ সময়ে ছুটিতে না থাকতে পারার কষ্ট ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এমন একটা বয়সে পৌঁছে গেছি, চাইলে কাঁদতেও পারব না। সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা অবধি ডিউটি। ঈদের নামাজটা এখানে পড়লাম। আবার রোগীদের দেখাশোনার কাজও করতে হয়। এইতো জীবন। কিছু মানুষকে তো সেক্রিফাইস করতে হয়।

শনিবার (২২ এপ্রিল) রাজধানীর পান্থপথ ও গ্রিন রোডের কয়েকটি হাসপাতাল সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ হাসপাতালে সনাতন ধর্মাবলম্বী চিকিৎসক ও নার্সরা দায়িত্ব পালন করছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মুসলিমদের অগ্রাধিকার দিয়ে ঈদের রোস্টার (তালিকা) করেছে। তবে স্বল্প সংখ্যক মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের ঈদের মধ্যে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

গ্রিন রোডের কমফোর্ট হাসপাতালে ইনডোর মেডিকেল অফিসার তন্নী পাল বলেন, আমাদের ডিউটি ২৪/৭। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মুসলিম যারা তাদের ছুটিতে রাখার চেষ্টা করেছে। ঈদে আমরা ডিউটি করছি। আবার পূজার সময় তাদের ওপর চাপ যায়। যেহেতু হাসপাতাল ইমার্জেন্সি সেক্টর, ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখতে হয়। এ জন্য আমাদের ভাগাভাগি করে ডিউটি করতে হয়। আমরা চাই মুসলমান সহকর্মীরা ভালোভাবে উদযাপন করুক।  

পান্থপথের বিআরবি হাসপাতালের ডা. রিপন সাহা জরুরি বিভাগ দেখভাল করছেন। তিনি বলেন, মুসলিম চিকিৎসকদের ছুটিতে রেখে রোস্টার করা হয়েছে। একেবারে সবাইকে ছুটি দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে রাতে ডিউটি দেওয়া হয়েছে, যেন তারা ঈদটা পরিবারের সঙ্গে করতে পারে। পূজোর সময় তারা সাপোর্ট দেন। এটাই আমাদের ধর্মীয় সম্প্রতি। মুসলিম কলিগরা রাতে আমাদের জন্য ঈদের খাবার নিয়ে আসবে। ঈদের আনন্দটা সবার। সবাই মিলে একসঙ্গে উদযাপন করি।

আজ সারা দেশে পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদের ছুটিতে দেশের সরকারি-বেসরকারি বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানে ছুটি চলছে। তবে জরুরি সেবায় নিয়োজিতদের ঈদের মধ্যেও অফিস করতে হচ্ছে। মানুষের সেবায় নিয়োজিত পেশাজীবীদের এ ঈদের ছুটি মেলে তো পরের ঈদে মেলে না। আবার অনেকের কোনো ঈদেই মেলে না ছুটি। পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটাতে না পারার আক্ষেপ নিয়েই তাদের জীবনে ঈদ আসে ঈদ যায়।

ঢাকায় ২২ বছরের বেশি সময় ধরে থাকছেন কিশোরগঞ্জের মেনু মিয়া। নিরাপত্তাকর্মীর দায়িত্ব পালন করা মেনু এ সময়ে দুই থেকে তিনবার বাড়ি গিয়ে ঈদ করতে পেরেছেন। বাকি সবগুলো ঈদ তাকে ঢাকায় করতে হয়েছে। বাড়িতে ঈদ করতে না পারার আক্ষেপ মন পোড়ায় তার। মেনু বলেন, বাড়ির সবার জন্য মন কাঁদে। সবার সঙ্গে ঈদ করতে পারলে আনন্দ লাগত।

পান্থপথে ইস্টার্ন ডো‌লেন টাওয়ারের নিচে মন খারাপ করে বসে আছেন চট্টগ্রামের মো. মোরশেদ। মাসখানেক আগে মাক্স সিকিউরিটিতে চাকরি নিয়েছেন তিনি। এই প্রথম পরিবারকে ছেড়ে একাকী ঈদ করতে একেবারে ভালো লাগছে না মোরশেদের। তিনি বলেন, মায়ের জন্য বেশি খারাপ লাগছে। বন্ধুরা সবাই আমারে মিস করছে। সবাই শুধু ফোন দিচ্ছে।

গ্রিন রোডের ব্র্যাক ব্যাংকের এটিএম বুথের সামনে চেয়ারে বসে মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত করছেন নিরাপত্তাকর্মী মো. সোলায়মান। সেখানে কথা হলে তিনি জানান, ঈদে বাড়ি না যেতে পারায় তার মন খারাপ, তাই মোবাইলে সময় পার করছেন। এ প্রথম তিনি খুলনায় তার পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারছেন না।  

ধানমন্ডির রাসেল স্কয়ারে ঈদের দিনে দায়িত্ব পালন করছেন সার্জেন্ট ফয়সাল আহমেদ। ঈদে ছুটি পাননি তিনি। সেজন্য গোপালগঞ্জে পরিবারের সঙ্গে ঈদ না করতে পারার কথা জানতেই ফয়সাল বলেন, আসলে এটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। একটা মাস রোজা রেখেছি। ভাবলাম বাবা-মায়ের সঙ্গে গিয়ে ঈদের নামাজ পড়ব। কিন্তু দায়িত্ব মানুষের নিরাপত্তা দেওয়া। সেদিক বিবেচনা করলে দায়িত্ব আগে।

সনাতন ধর্মাবলম্বী কনস্টেবল সন্দীপ দাশ ধানমন্ডি জোনে দায়িত্ব পালন করেন। ঈদে তার দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে অন্য মুসলিম কনস্টেবল ছুটি পাচ্ছেন, এ বিষয়টি নিয়ে খুশি সন্দীপ। তার ভাষায়, আমা ডিউটির কারণে একটা মুসলিম ভাই ছুটি পাচ্ছে, এটা খুব ভালো লাগছে।

এনআই/এসকেডি