রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানার জামিন না মঞ্জুর করাসহ মামলার সকল আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ শ্রমিক সংহতি ফেডারেশন।

রোববার (৭ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলে এ দাবি জানায় সংগঠন দুটির নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ শ্রমিক সংহতি ফেডারেশন।

সমাবেশে সম্মিলিত গার্মেন্টস্ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার বলেন, ২০১৩ সালে সাভারের রানা প্লাজা নামক ভবন ধ্বসে সরকারি হিসেবে ১১৩৮ জন শ্রমিক প্রাণ হারান এবং আড়াই হাজার শ্রমিককে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। আহত হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন সহস্রাধিক শ্রমিক। যাদের মধ্যে অন্তত এক হাজার শ্রমিক পঙ্গুত্ব বরণ করে বেঁচে আছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই শ্রমিকদের দুর্ভোগ, দুর্দশা ও মানবেতর জীবনের চিত্র সকলের আড়ালেই পরে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ভবন মালিক সোহেল রানা ও ৫টি গার্মেন্টস মালিকের বিরুদ্ধে সরকার বিভিন্ন আইনে ৩টি মামলা দায়ের করেন, যা গত ১০ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি। এদের মধ্যে সোহেল রানা ব্যতীত মামলার বাকি সকল আসামি জামিনে আছেন। কিছুদিন আগে সোহেল রানার জামিন মঞ্জুর হলে বাংলাদেশের মানুষ এর প্রতিবাদে সোচ্চার হয়। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তে সোহেল রানা মুক্তি না পেলেও আগামীকাল (৮ মে) তার জামিন বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এই সমাবেশ থেকে সোহেল রানার জামিন না মঞ্জুর করার জন্য জোর দাবি জানাই।

বাংলাদেশ শ্রমিক সংহতি ফেডারেশনের সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ মামলার সকল আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে। রানা প্লাজায় আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসনের সুব্যবস্থা করতে হবে।

সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ শ্রমিক সংহতি ফেডারেশনের পক্ষ থেকে জানানো দাবিগুলো হচ্ছে-

১. রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ মামলার সকল আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে

২. সোহেল রানার জামিন না মঞ্জুর করাসহ রানা প্লাজায় আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসা, কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসনের সু-ব্যবস্থা করতে হবে

৩. রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত শ্রমিকদের সন্তানদের লেখাপড়ার সুব্যবস্থা করতে হবে

৪. সকল ক্রেতা ও ব্যান্ডকে একোর্ড চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে

৫. ন্যূনতম মজুরি ২৩ হাজার টাকা করতে হবে

৬. ইপিজেডসহ সকল কারখানায় অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন ও যৌথ দরকষাকষি করার স্বাধীনতা দিতে হবে

৭. সকল ক্রেতা ব্র‍্যান্ডকে ও মালিকদের কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত বিমার অংশগ্রহণ করতে হবে

৮. সকল শ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনাজনিত বিমার আওতায় আনতে হবে

৯. সকল শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে

১০. সকল শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে;

১১. পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস করতে হবে

১২. কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি সকল প্রকার সহিংসতা ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধে আইন প্রণয়ন ও আইএলও সনদ ১৯০ অনুস্বাক্ষর করতে হবে।

সম্মিলিত গার্মেন্টস্ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তারের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত গার্মেন্টস্ শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেতারা ও বিভিন্ন এলাকার ৪০টি ইউনিয়নের নির্বাহী কমিটির সদস্যসহ আরো শ্রমিকগণ।

ওএফএ/এমজে