আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট চূড়ান্ত করতে বুধবার (১০ মে) সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের নেতৃত্বে বাজেট তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বৈঠকে সরকারি কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতার এজেন্ডা ওঠেনি। ফলে আগামী বাজেটে মহার্ঘ ভাতার বরাদ্দ থাকছে না। তবে অন্য কোনো খাতে ‘থোক বরাদ্দ’ হিসেবে থাকতে পারে। যা বাজেটের পর সরকারপ্রধান ঘোষণা দিতে পারেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র এমন তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, বুধবারের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে মহার্ঘ ভাতার এজেন্ডা আনা হয়নি। তাই অর্থ মন্ত্রণালয়ও প্রস্তাব প্রস্তুত করে রাখলেও শেষ পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।

জানা গেছে, বৈঠকে আগামী অর্থবছরের বাজেটের সার-সংক্ষেপের অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ধরে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।  

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের বাজেট আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট। তাই এ বাজেটকে নির্বাচনী বাজেটও বলা যায়। এ বাজেটে ৮ বছর পর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে সব মহলে আলোচনা হচ্ছে। তবে নতুন পে-স্কেল নয়, মহার্ঘ ভাতার বিষয়টি আলোচনায় আছে। তাই নিবার্চনী বছরে কর্মচারীদের জন্য সুখবর থাকতে পারে। সরকার প্রধান হয়তো আলাদাভাবে সেটি ঘোষণা করবেন।

তবে বৈঠকে থাকা একটি সূত্র বলছে, কর্মচারীদের জন্য কোনো ঘোষণা আসতে পারে। সেটি হয়তো এখন বলতে চাইছেন না সরকারপ্রধান। বাজেটের কোনো একটি খাতে মহার্ঘ ভাতার জন্য যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন তা থোক বরাদ্দ হিসেবে রেখে দিতে পারেন। বাজেটের পর আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসের দিকে এ ব্যাপারে ঘোষণা দেবে সরকার। এর আগে যে কয়টি পে-স্কেল ও মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা করা হয়েছে তা বাজেটের ঘোষণার দুই-তিন মাস পর ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা যে মাসেই হোক না কেন তা ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে।

ব্যাখ্যা হিসেবে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বাজেটে এ খাতের জন্য সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখা হয় না। অন্য কোনো একটি খাত থেকে থোক বরাদ্দ এনে বরাদ্দ দেওয়া হবে।

এদিকে নবম পে-স্কেল, ৫০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতার দাবিতে আন্দোলনে রয়েছেন সরকারি কর্মচারীরা। আগামী ২৬ মে সাত দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশে ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী ঐক্য পরিষদ।

কর্মচারীরা বলছেন, সর্বশেষ অষ্টম জাতীয় পে-স্কেল কার্যকর হয় প্রায় আট বছর আগে ২০১৫ সালে। দীর্ঘ এ সময়ে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে কয়েকগুণ। এ অবস্থায় পরিবার নিয়ে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন চাকরিজীবীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে নবম পে-স্কেল বাস্তবায়ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশে সরকারি চাকরিজীবী ১৪ লাখের কিছু বেশি। স্বায়ত্তশাসিত, সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকসহ এ সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ। এ সংখ্যক কর্মকর্তাদের বেতন ভাতা দিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে বেতন-ভাতার জন্য মোট বরাদ্দ ছিল ৭৩ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা। আসন্ন অর্থবছরে বেতন-ভাতা খাতে ৭৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রাক্কলন করেছে অর্থ বিভাগ।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মহার্ঘ ভাতা শুধু মূল বেতনের ওপর দেওয়া হবে। সে হিসেবে সবাইকে ১০ শতাংশ হারে দিলে ৪ হাজার কোটি টাকা, ১৫ শতাংশ হারে দিলে ৬ হাজার ও ২০ শতাংশ হারে দিলে সর্বোচ্চ ৮ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হতে পারে। যেহেতু মহার্ঘ ভাতা মূল বেতনের সঙ্গে যুক্ত হয় না, ফলে তাদের বাড়িভাড়া ভাতাসহ অন্য কোনো ভাতার হেরফের হবে না।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, মহার্ঘ ভাতায় বাড়ি ভাড়া বাড়ে না। এক্ষেত্রে নির্ধারিত সিলিং তৈরি করে শুধু মূল বেতন বৃদ্ধি করা হয়। সর্বশেষ জাতীয় বেতন স্কেলের আওতাভুক্ত চাকরিজীবীদের মূল বেতনের ১০ থেকে ২০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি করা হবে। যদি ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পায় তাহলে একজন সরকারি কর্মচারীর বেতন সর্বনিম্ন বাড়বে ১ হাজার ৬৫০ থেকে সর্বোচ্চ আট হাজার টাকা।

সরকারের জাতীয় বেতন স্কেলের আওতাভুক্ত সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সামরিক বাহিনীর সব সদস্য এ মহার্ঘ ভাতা পাবেন। এছাড়া এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরাও এ ভাতা পাবেন। একইসঙ্গে অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছুটি পূর্বকালীন সর্বশেষ প্রাপ্য মূল বেতনের ভিত্তিতে এ ভাতা পাবেন।

এনএম/জেডএস