ভিডিও ভাইরালের ভয়েই আত্মহত্যা করে রংপুরের সেই মেয়েটি
সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন সিআইডির ডিআইজি শেখ নাজমুল আলম/ ছবি: ঢাকা পোস্ট
দুই বউকে তালাক দেওয়া হাফিজুর রহমান (২৫) মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে প্রেমের জালে ফেলেন নবম শ্রেণির ছাত্রীকে। এরপর জড়ান অন্তরঙ্গ সম্পর্কে। আর তার দৃশ্য ধারণ করেন বন্ধু বিপুল চন্দ্র (২৬)। পরে সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেও একাধিকবার ধর্ষণ করা হয় কিশোরীকে। ওই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ভয়েই আত্মহত্যা করে মেয়েটি।
অন্তরঙ্গ ভিডিও ফাঁসের ঘটনায় হাফিজুর রহমানকে গ্রেফতারের পর বুধবার (২৪) দুপুরে এসব কথা বলেন অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ডিআইজি শেখ নাজমুল আলম।
বিজ্ঞাপন
সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, রংপুর জেলার বদরগঞ্জ থানাধীন ১৫ নম্বর লাহোনীপাড়া ইউনিয়নের কাচাবাড়ি গ্রামের নবম শ্রেণির এক ছাত্রী গত ৫ জানুয়ারি বিষপানে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় একটি অপমৃত্যুর (ইউডি) মামলা হয়।
ঘটনার তদন্তে জানা যায়, ওই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য ইউনুস আলীর ছেলে হাফিজুর রহমান মেয়েটিকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করেন ও সহযোগী বিপুল চন্দ্রকে দিয়ে মুঠোফোনে ভিডিও ধারণ করান। ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে কিশোরীকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন হাফিজুর রহমান।
বিজ্ঞাপন
ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার আশঙ্কায় মেয়েটি নিজের ও পরিবারের মর্যাদাহানির কথা চিন্তা করে বিষপান করে। তাকে বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বলেন। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মেয়েটি মারা যায়।
শেখ নাজমুল বলেন, গত ২২ ফেব্রুয়ারি ভিডিওটি ওই এলাকায় ভাইরাল হয়। এরপর কিশোরীর বিধবা মা বাড়ি ছাড়েন। তিনি কোথায় গেছেন প্রতিবেশীরা কেউই তা জানত না, বাড়িতে তখন তালা ঝুলছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার দুই ব্যক্তি অভিযোগ করেন, হাফিজুর রহমান মেয়েটিকে ব্ল্যাকমেইল করায় মেয়েটি আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। হাফিজুর রহমানের এলাকার লোকজন বলেন, হাফিজুর দুটি বিয়ে করে। দুই স্ত্রীকেই তালাক দিয়েছে। অনুসন্ধানের সময় তাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তবে তার বাবা ইউনুছ দাবি করেন, তিনি ইউপি নির্বাচন করবেন, তাই তার পরিবারকে ঘায়েল করতে ছেলের নামে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
ডিআইজি শেখ নাজমুল আলম বলেন, অপরাধ সংঘটনের পরই সিআইডি ছায়া তদন্ত শুরু করে। অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর এ ঘটনায় জড়িত হাফিজুর রহমানকে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন জামগড়া এলাকা থেকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে হাফিজুর রহমান। তবে ভিডিওটি ভাইরাল করে বিপুল চন্দ্র। তাকে এখনও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। বিপুলকে আটক করা গেলে আরও অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে।
জেইউ/এসএসএইচ