একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির ভাতিজাকে কাউন্সিলর বানাতে ও জোসেফ-হারিস-আনিসের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য পরিকল্পিতভাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। এমন অভিযোগ তুলে এই বিশেষ মহলের দ্রুত গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন রাজীব নিজেই।

রোববার(২৮ মে) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন সাবেক যুবলীগ নেতা রাজীব।

সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে রাজীব ও উত্তর সিটির ৩২ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান।

ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তারেকুজ্জামান রাজীব বলেন, খুব অল্প বয়সেই আমি সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি দেখে ঈর্ষান্বিত হয় ঢাকার সন্ত্রাসীগোষ্ঠী তোফায়েল আহমেদের জোসেফ-হারিস-আনিস গং। তাদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ২০১৯ সালের অক্টোবরে আমাকে গ্রেপ্তার করানো হয়। এসব কিছু করা হয়েছে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও তার সন্ত্রাসী ভাইদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য।

তিনি আরও বলেন, আমাকে আটকের পর রাতভর আমার বাসা ও অফিসে তল্লাশি অভিযান চলেছিল। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তাদের মতো করে সন্ধান করেছে। তবে অভিযান শেষে অভিযান পরিচালনাকারী দল গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল, আমার কোন ক্যাসিনো সম্পৃক্ততা নেই। অথচ সেই অভিযান ছিল ‘ক্যাসিনো অভিযান’।

অঢেল সম্পদের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদেশে আমার কোন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য-প্রমাণও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তদন্তে পায়নি।

সাবেক এ কাউন্সিলর বলেন, নব্বই দশক থেকে জোসেফ-হারিস পরিবার ঢাকা শহরের সন্ত্রাসীগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। তবে তারা রাজনৈতিকভাবে আত্মপ্রকাশ করতে চায়। মোহাম্মদপুর তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের পুরোনো অভয়ারণ্য। সেই এলাকার একজন কাউন্সিলর ছিলাম আমি।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, ‘ভাতিজা আসিফ আহমেদ’কে কাউন্সিলর বানাতে পরিকল্পিতভাবে আমাকে গ্রেপ্তার করানো হয়েছিল। ২০১৯ সালে গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত আমার নামে একটা মামলা কিংবা জিডি পর্যন্ত ছিল না। কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িত না হয়েও শুধুমাত্র ওই সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর প্রভাবে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

বিনা অপরাধে তিন বছরের বেশি সময় জেলে থাকতে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার জীবন থেকে তিনটি বছর কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আমি এবং আমার পরিবার ওই সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর হুমকির মুখে আছি। আমার প্রাণনাশের শঙ্কা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অমানবিক ঘটনায় জড়িত বিশেষ মহলের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

গ্রেপ্তারের সময় যেসব অভিযোগ উঠেছিল সেসবের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ আমি আপনাদের সামনে কথা বলতে এসেছি। কারো সৎ সাহস না থাকলে কোন ব্যক্তি আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারে না।

সেই প্রভাবশালী ব্যক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা বিজ্ঞ মানুষ, আপনারা কথাগুলো বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। আমরা দুজন কাউন্সিলর থাকা অবস্থায় তারা আমাদের জীবনের গতি পাল্টে দিয়েছে। তাই ইচ্ছে থাকা স্বত্বেও তার নাম প্রকাশ করতে পারছি না। আমার এবং আমার পরিবারের নিরাপত্তা শঙ্কা রয়েছে। আমরা আপনাদের মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

মোহাম্মদপুর এলাকায় আরও কাউন্সিলর রয়েছে, তাহলে শুধুমাত্র আপনাদেরই কেন টার্গেট করা হয়েছিল জানতে চাইলে রাজীব বলেন, আপনারা জানেন তাদের ভাতিজা আসিফ, যিনি ইতোপূর্বে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। আমার নির্বাচিত এলাকায় তাকে কাউন্সিলর বানাতেই আমাকে টার্গেট করা হয়। ৯০ দশক থেকেই তাদের ওই এলাকায় বেশি জমিজমা, যেখানে তাদের পুরানো আবাস রয়েছে। মূলত আমাকে নির্মূল করতেই মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করানো হয়।

জেইউ/এমজে