রাজধানীর মিরপুরের লাভ রোডে বাসা থেকে মোবাইলে ডেকে নিয়ে টাকা দাবি করে জাহাঙ্গীর আলম (২৭) নামে একজনকে গলা কেটে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে তার বন্ধু সাগর ও শাহেদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করেছে মিরপুর মডেল থানা পুলিশ।

শুক্রবার (২৬ মে) রাত ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগে চিকিৎসাধীন আছেন জাহাঙ্গীর।

হাসপাতালের নাক পান গলা বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, জাহাঙ্গীর আলমের গলায় ব্যান্ডেজ করা। তিনি কথা বলতে পারছেন না। পাশে বসে আছেন তার মা জাহানারা বেগম।

ওই রাতে কী ঘটেছিল জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদকের কাছে খাতা কলম চান। পরে তিনি লেখেন, রাতে ফোন দিয়ে সাগর বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে সে আমার কাছে দুই হাজার টাকা দাবি করে। তখন সাগর ও শাহেদ মাতাল ছিল। টাকা চাওয়ার পর আমি বললাম, কিসের টাকা দেব। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে একটি ছুরি দিয়ে আমার গলায় পোচ দেয়। পরে আমাকে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে একটি আরটিআর মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়।

তিনি জানান, সাগরের একটি গ্যারেজ আছে। আমার একটা বাইক ছিল। ওই বাইকটা ছাড়ার কথা বলে নাকি আমি তার কাছ থেকে দুই হাজার টাকা ধার করেছিলাম। আমাকে ফোন দিয়ে ডেকে নিয়ে সেই ধারের টাকা চায়। কিন্তু আমি তো তার কাছ থেকে কোনো টাকা ধার নিইনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরের মা জাহানারা বেগম বলেন, সাগর মোবাইল ফোনে আমার ছেলেকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে খবর পেলাম, কারা যেন আমার ছেলের গলা কেটে ফেলেছে। আমাকে ঢাকা মেডিকেলে আসতে হবে। তখন আমি সাগরের মোবাইলে কল দিই। বলি, জাহাঙ্গীর কোথায়। সাগর জানায়, আমার কাছ থেকে দুই ঘণ্টা আগেই জাহাঙ্গীর চলে গেছে। তখন সাগরের মা জানায়, কারা যেন তার (জাহাঙ্গীর) গলায় পোচ দিয়েছে। আমি সাগরকে বলি, আমি তো ঢাকা মেডিকেল চিনি না, আমাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে চলো। তখন সাগর জানায়, আমি ব্যস্ত আছি, এখন যেতে পারব না। পরে সাগর আমার সঙ্গে ঢাকা মেডিকেলে যেতে রাজি হয়। আমি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি কিন্তু সাগর ফোন ধরে না, আসেও না। পরে আমি একটি সিএনজি নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে এসে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় আমার ছেলে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে চিড়িয়াখানা রোডের একটি গাড়ির ড্রাইভার। আমার ছেলে ইশারায় আমাকে বিষয়টি খুলে বলে। সাগর ও শাহেদ তার গলায় পোচ দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে গেছে। পরে জাহাঙ্গীরের বাবা মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা করেন। আমার ছেলে কথা বলতে পারছে না, তার অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

এ বিষয়ে মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোহসীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পুলিশের সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। বর্তমানে আহত জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা মেডিকেলের নাক কান গলা বিভাগে চিকিৎসাধীন আছেন।

তিনি আরও বলেন, কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছিল তা সে কাগজে লিখে আমাদের জানায়। পরে আমরা সাগর ও শাহেদ নামে দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করি। এ ঘটনায় জাহাঙ্গীরের বাবা বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা (মামলা নং-৫৩) করেন।

ওসি মোহাম্মদ মোহসীন বলেন, আদালতে সাগর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জাহাঙ্গীর জানিয়েছে টাকা-পয়সার একটি লেনদেন নিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে।

এসএএ/এসএসএইচ/