ছবি : সংগৃহীত

পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ার ডিআইটি পুকুর রক্ষার দাবিতে স্থানীয় এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদীদের আয়োজিত মানববন্ধনে পুলিশের অনুমতি না দেওয়া এবং সেখানে দখলদার কর্তৃক পরিবেশকর্মীদের হেনস্তার ঘটনায় পুলিশের নীরব ভূমিকার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো সমন্বিত সংগঠন বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট (বিএনসিএ)।

পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে কেন পুলিশের অনুমতি নিতে হবে জানতে চাওয়ার পাশাপাশি দ্রুত পুকুরটি উদ্ধারের উদ্যোগ না নিলে পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন ও রাজউকের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর এই জোট।

শনিবার (৩ জুন) বিকেলে জোটের সদস্য সচিব ও পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ আওয়ার সি-এর মহাসচিব মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক স্বাক্ষরিত এক প্রতিবাদ বার্তায় এই নিন্দা জানানো হয়।

গেন্ডারিয়ার পুলিশের সামনে জোটের আহ্বায়ক, পরিবেশবিজ্ঞানী ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদারকে হেনস্তা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে বিবৃতিতে বলা হয়, ডিআইটি পুকুর রক্ষার দাবিতে গতকাল শুক্রবার পুকুরটির পাড়ে একটি মানববন্ধন করার ঘোষণা দিয়েছিল স্থানীয় জনগণ। সেই মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে সেখানে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট (বিএনসিএ) ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)সহ পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর নেতারা। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো পুলিশ অনুমতি না দেওয়ায় মানববন্ধনটি করা যায়নি।

তবে পুলিশ পরিবেশকর্মীদের অনুমতি না দিলেও, ঠিকই পুকুরপাড়ে জড়ো হয়ে স্লোগান দিয়েছে দখলদারদের লোকজন। সে সময় তারা বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-এর যুগ্ম সম্পাদক এবং বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট (বিএনসিএ) এর আহ্বায়ক দেশের খ্যাতিমান পরিবেশবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদারসহ পরিবেশকর্মীদের হুমকি-ধমকি দিয়ে হেনস্তা করেছে।

যদিও তাদের এই উশৃঙ্খল আচরণ নিয়ন্ত্রণে পুলিশের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। যা গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। এই ঘটনা আমাদের চরমভাবে ব্যথিত করেছে। পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনের জন্য পুলিশ কমিশনারের অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা দেওয়ার বিষয়টিও বেশ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট (বিএনসিএ) পুলিশের এমন আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

পুকুর রক্ষার আন্দোলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়,বর্তমানে পুরান ঢাকায় পুকুর রয়েছে মাত্র ২৪টি। যার মধ্যে ডিআইটি প্রকল্পের পুকুরটি অন্যতম একটি বড় জলাধার। যা আশপাশের এলাকার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, অগ্নি নির্বাপণ, ভূগর্ভস্থ পানির সংস্থান, বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণসহ নানানভাবে ভূমিকা রেখে আসছে। কিন্তু বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য মতে ২০১৭ সাল থেকে পুকুরটিতে দখল চলছে। সম্প্রতি এই পুকুরে আবারও মাটি ফেলে ভরাট করছে একটি পক্ষ। আইন অমান্য করে এভাবে পুকুর দখলের খবর স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি স্বাভাবিকভাবেই ভাবিয়ে তুলেছে বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট (বিএনসিএ) এর সদস্যভুক্ত সংগঠনসহ পরিবেশ সংরক্ষণে কাজ করা প্রত্যেককেই।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পরিবেশ আইন-১৯৯৫, প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০, পানি আইন-২০১৩, ভূমি ব্যবহার আইন ও ড্যাপ ২০১৬-৩৫ সহ অনেকগুলো আইনে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে পৌর, মহানগরী, জেলা ও বিভাগীয় শহরে মালিকানা যারই হোক না কেন প্রাকৃতিক জলাধার কোনোভাবেই ভরাট করা যাবে না। অথচ এতগুলো আইনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পুকুরটির দখল প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি রাজউক, পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কোনো পক্ষকে। এটি চরমভাবে হতাশাজনক এবং সন্দেহজনক। 

ওএফএ/এসকেডি