মাস্ক ছাড়া যত্রতত্র ঘুরছেন সবাই। ছবি- সুমন শেখ

করোনাভাইরাসের প্রভাবে ওলট-পালট পুরো বিশ্ব, একই দশা বাংলাদেশেরও। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে সংক্রমণ কিছুটা কমে এলেও দু’সপ্তাহ যেতে না যেতেই শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ঢেউ; যেটিকে আগের চেয়ে বিপজ্জনক মনে করা হচ্ছে।

করোনাভাইরাসে প্রাণহানি ঠেকাতে অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের না হওয়া, বাইরে গেলে মাস্ক পরা, বারবার হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হলেও সেসবে অনীহা দেখা যাচ্ছে অনেকের মধ্যেই। দেশে একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়ে গেলেও অপ্রয়োজনে বাইরে যাওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে খেতে যাওয়া, আনন্দ-বিনোদনের জন্য বেড়াতে যাওয়া চলছে আগের মতোই।

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়। তখন জনমনে ভীতি ছিল অনেক। ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে মানুষের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতাও দেখা গিয়েছিল। তবে এক বছর পরে এসে এখন আর সেই সচেতনতা নেই। দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়লেও অনেকটা গা-ছাড়া ভাব নিয়েই চলাফেরা করছেন নগরবাসী।

গত সোমবার (২৯ মার্চ) দেশে পাঁচ হাজার ১৮১ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়, যা করোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ। গতকাল মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) আক্রান্ত হন আরও ৫ হাজার ৪২ জন। এই দুইদিনে মারাও গেছেন ৪৫ জন করে।

এ অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে বারবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে তাগাদা দেয়া হলেও রাজধানী ঢাকায় অধিকাংশ মানুষকে অসচেতন অবস্থায় চলাচল করতে দেখা গেছে। মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে  দেখা গেছে, বেশিরভাগ মানুষ মাস্ক ছাড়া চলাচল করছেন। গণপরিবহনের যাত্রী, খাবার হোটেলের ওয়েটার, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের ক্রেতা-বিক্রেতাসহ বেশিরভাগ মানুষের মুখে মাস্ক চোখে পড়েনি। অনেকের আবার মাস্ক থাকলেও সেটা থুতনিতে নামিয়ে রাখা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব মানার বিষয়টি খুব একটা গায়েই মাখাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। 

ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে কিছু সময় পরপর সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সেই বিষয়টি অল্পকিছু লোক মানলেও বেশিরভাগের কাছে তা উপেক্ষিত হচ্ছে। এর ফলে করেনা সংক্রমণে বড়সড় বিস্ফোরণ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ধানমন্ডি শংকর বাস স্ট্যান্ডে কথা হয় চা বিক্রেতা জলিলের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ভুলবশত অনেক সময় মাস্ক ব্যবহার করতে মনে থাকে না। এছাড়া দোকানে অনেক কাস্টমার আসে, তারাও মাস্ক পরেন না।’

সিটি কলেজের সামনে কথা হয় পাঠাও রাইডার শাহীন চাকলাদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সবসময় তো হেলমেটের মধ্যেই থাকি, তাই মাস্কটা আলাদা করে পরা হয় না, তবে সঙ্গে ঠিকই থাকে। শুনছি আবারও নতুন করে ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েছে। এখন থেকে আবার পরার অভ্যাস করব।’

কমলাপুর রেল স্টেশনে কামরুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘করোনার প্রভাবে একটা সময় সবাই মাস্ক ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়েছিল। আমিও নিয়মিত পরেছি। মাঝে সংক্রমণ কমে যাওয়ায় মাস্ক পরা বাদ দিয়েছিলাম। নতুন করে অভ্যাসটা গড়ে ওঠেনি। বাঁচতে হলে তো মাস্ক পরতে হবে। আবারও পরা শুরু করব।’

এদিকে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে সরকার নতুন করে ১৮টি নির্দেশনা জারি করেছে।

স্বাস্থ্যবিধি মানায় সাধারণ মানুষের এমন উদাসীনতায় হতাশ বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বিশেষ করে মাস্ক পরতে বাধ্য করা উচিত। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এক বছর ধরেই মাস্ক ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি বেশির ভাগ মানুষই মানছেন না। নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতে ভলেন্টিয়ার টিম প্রয়োজন। সরকারের এত বেশি পুলিশ নেই যে সেটি বাস্তবায়ন করবে। মাস্ক ব্যবহারের জন্য সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।’

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এক বছর ধরেই মাস্ক ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে। বিষয়টি বেশির ভাগ মানুষই মানছে না। জনগণের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতে ভলেন্টিয়ার টিম প্রয়োজন। সরকারের এতো বেশি পুলিশ নেই যে সেটি বাস্তবায়ন করবে। মাস্ক ব্যবহারের জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম, সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

তিনি আরও বলেন, ‘এবার ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশংকা রয়েছে। গত দুইদিনে ৪৫ জন করে মানুষ মারা গেছেন। এই মানুষগুলো কী কী কারণে মারা গেছেন, তার বিশ্লেষণ পাওয়া গেলে ভালো হতো। আবার পেরিফেরিতে  আইসিইউ নেই। যদি সেখানে আইসিইউয়ের ব্যবস্থা করা যায় তবে ঢাকার দিকে চাপ কমবে।’

এমএইচএন/এমএইচএস/জেএস