করোনার এই পরিস্থিতিতে এত বড় আয়োজনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অংশ নেওয়া চিকিৎসকরাও

২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র পরিদর্শক, পরীক্ষক ও কন্ট্রোল রুমের দায়িত্ব পাওয়া চিকিৎসকদের নিয়ে ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রাম আয়োজন করেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতর। তিন শতাধিক চিকিৎসক নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ডা. মিলন অডিটোরিয়ামে সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয় অনুষ্ঠানটি। 

ওরিয়েন্টেশনে অংশ নেয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমরা আগেই জানতাম আজকে এরকম একটা সমাবেশ হতে চলেছে। দেশে করোনার এমন সংকটকালে এভাবে সবাইকে একসঙ্গে এনে এরকম জনসমাগম না করলেও পারত। মেইল করে আমাদের নির্দেশনা দিয়ে দিলেই হতো।’

তিনি বলেন, ‘এখানে অনেকে করোনা সংক্রমিত থাকতে পারেন, তাদের মাধ্যমে নতুন করে অনেকেই আক্রান্ত হতে পারেন। করোনা সংক্রমণের মতো ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়কে এভাবে ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়ে এ রকম আয়োজন করাটা নিতান্তই বোকামি।’

অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া আরেক চিকিৎসক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠান মানে শুধুই নির্দেশনা, মেইলে কি দিয়ে দেওয়া যায় না এসব নির্দেশনা? অনুষ্ঠান থেকে আমরা পজিটিভ হওয়া মানে পরবর্তীতে আমরা যেসব রোগী দেখবো, তারাও পজিটিভ হয়ে যেতে পারেন। করোনা রোগী দেখতে গিয়ে পজিটিভ হলে তো সমস্যা নেই, এভাবে অবহেলার কারণে পজিটিভ হলে তো সব দিক দিয়েই ক্ষতি।’

দেশে আবারও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ১৮ দফা জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে। নির্দেশনার প্রথম দফাতেই বলা হয়েছে, সব ধরনের জনসমাগম (সামাজিক/রাজনৈতিক/ধর্মীয়/অন্যান্য) সীমিত করতে হবে। উচ্চ সংক্রমণযুক্ত এলাকায় সব ধরনের জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হলো। বিয়ে/জন্মদিনসহ যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে। 

স্বাস্থ্য অধিদফতর সর্বশেষ মঙ্গলবার যে তথ্য দিয়েছে তাতে নতুন করে আরও ৫ হাজার ৪২ জনের করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যদিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৫ হাজার ৯৩৭ জনে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্যে ৪৫ জনের মৃত্যুর কথাও জানানো হয়েছে। এ নিয়ে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৯৯৪ জনে।

অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া এক চিকিৎসক বলছেন, অনুষ্ঠান থেকে আমরা পজিটিভ হওয়া মানে পরবর্তীতে আমরা যেই রোগী দেখবো, সেও পজিটিভ হয়ে যেতে পারে

ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ও রোগতত্ত্ববিদরা এটাকে করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ বলে উল্লেখ করছেন। তারা বলছেন, বিগত ঢেউয়ের তুলনায় এবার সংক্রমণ বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। করোনা বেশি শক্তি নিয়ে এসেছে এবার, যা উদ্বেগজনক।

এপ্রিলের ২ তারিখেই পরীক্ষা নেওয়া জরুরি?
ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা বলছেন, দেশে বর্তমান পরিস্থিতিতে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন। এই অবস্থাকে শুধু ঊর্ধ্বমুখী বললে হবে না, এটি রেকর্ড সংক্রমণ। ঢাকার কোনো হাসপাতালে আইসিইউ সিট খালি নেই। এমন পরিস্থিতিতে এত বড় পাবলিক পরীক্ষা নেওয়া কীভাবে সম্ভব? তাদের প্রশ্ন, পরীক্ষার্থীদের ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিয়ে এপ্রিলের ২ তারিখেই পরীক্ষা নিতে হবে কেন? 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরীক্ষার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘প্রতি বছর মেডিকেলে ৭৫ থেকে ৭৮ হাজার পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। সেখানে এবছর এক লাখ ২২ হাজারের ওপর পরীক্ষা দিচ্ছেন। তাদের সঙ্গে অভিভাবকরাও থাকবেন। এতো বড় জনসমাগম কেন হতে দেওয়া হবে? এতে পরীক্ষার্থী বা তাদের পরিবারগুলোর কোনো ক্ষতি হলে এর দায়ভার কে নেবে?’

টিআই/এনএফ/জেএস