সাইবার ক্রাইম ও ই-কমার্স সংক্রান্ত প্রতারণা নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ

সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো ২০২১’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।

আব্দুল হামিদ বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের ফলে সাইবার ক্রাইমের মাত্রাও বেড়ে যাচ্ছে। অনেক সময় বিভিন্ন ইস্যুতে সামাজিক অস্থিরতাও দেখা দেয়। তাই, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘কিছু সংখ্যক উদ্যোক্তা ই-কমার্সের নামে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। মুষ্টিমেয় কিছু অসাধু লোকের প্রতারণার জন্য যাতে ই-কমার্সের মতো একটি বিপুল সম্ভাবনাময় খাতের প্রসার কোনোভাবেই থেমে না যায়, তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং করতে হবে।’

করোনার কারণে অনলাইনে কেনাকাটা বহুগুণে বেড়ে গেছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ই-কমার্স এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক খাত। এই মহামারিকালে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করেই দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল রাখা সম্ভব হয়েছে। ই-কমার্সের প্রতি ক্রেতাদের এ আগ্রহকে ধরে রাখতে হলে ক্রেতাদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের বাস্তবায়ন আমাদেরকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার শক্তি ও সাহস যোগাচ্ছে। বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা এখন তৈরি করছে রোবোটসহ নানাবিধ সামগ্রী। বাংলাদেশের তরুণরা আন্তর্জাতিক রোবোটিকস ও ব্লকচেইন অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে সম্মানজনক ফলাফল অর্জন করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মেধাবী তরুণদের কাজে লাগিয়ে স্থানীয় টেকসই প্রযুক্তির উদ্ভাবন, প্রসার এবং ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আমরা পৃথিবীর বুকে একটি উন্নয়নশীল দেশের মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবো, ইনশাআল্লাহ।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিপ্লবে শামিল হওয়ার লক্ষ্যে দেশে বিজ্ঞান, গবেষণা ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ভিত্তি রচনা করেছিলেন উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি জানান, ১৯৭২ সালে তিনি ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) সদস্যপদ লাভের উদ্যোগ নেন এবং ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ আইটিইউর সদস্য হয়।

আবদুল হামিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে কম্পিউটার আমদানিতে শুল্কহার হ্রাস করেন। মোবাইল ফোনের মনোপলি ভেঙে তা সাধারণ মানুষের কাছে সহজলভ্য করেন। এছাড়া ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে তিনি ঘোষণা করেন রূপকল্প ২০২১। এই রূপকল্প ২০২১ প্রণয়নের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশকে এর মূল উপজীব্য করতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সজীব ওয়াজেদ জয়।’

২০০৯ সাল থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই সময়ে দেশে আইসিটি অবকাঠামো ও কানেক্টিভিটি, দক্ষ মানবসম্পদ, ই-গভর্নমেন্ট, ইন্ডাস্ট্রি প্রোমোশনে গৃহীত অধিকাংশ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হওয়ায় দেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।’

তিনি জানান, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ এলাকা মোবাইল কভারেজের আওতায়। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৬ কোটি ছাড়িয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটির বেশি। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে দেশের প্রত্যন্ত এলাকাসহ ৩ হাজার ৬০০ ইউনিয়নে।’

বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগ, বাংলাদেশ হাই-টেক কর্তৃপক্ষ, ইনোভেশন ডিজাইন অ্যান্ড এন্টারপ্রেনারশিপ একাডেমি, এটুআই, স্টার্টআপ বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এসময় আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান একেএম রহমতউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।

আরএইচ

সূত্র : বাসস