গেল কয়েকদিনে করোনার যে চিত্র বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণের প্রথম দফায় তা দেখা যায়নি। মার্চের ২১ তারিখেও যেখানে সংক্রমণ ছিল ২ হাজার ১৭২ জন, এপ্রিলের ১ তারিখে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪৬৯ জনে। ১০ দিনের মাথায় আক্রান্তের সংখ্যার এত বড় উল্লম্ফন আগে দেখেনি বাংলাদেশ।  

তবে রাস্তা-ঘাট বা দোকানপাটে এর প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে না। সামাজিক দূরত্ব বজায়সহ করোনা প্রতিরোধের অন্যান্য বিধিনিষেধ মানার বিষয়ে বেশিরভাগ মানুষই অসচেতন। রাজধানীর অধিকাংশ জনবহুল এলাকায় মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। অথচ সারাবিশ্বেই করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই এই জনবহুল এলাকাগুলো নিয়েই বেশি শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। এরপরও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা তো দূরের কথা, মাস্ক পরতেও অনীহা দেখা যাচ্ছে অনেকের মধ্যে।  

বিভিন্ন জায়গায় ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ লিখে রাখা হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা স্রেফ লোক দেখানোর চেয়ে বড় কোনো ভূমিকা রাখছে না। বিভিন্ন বিপণিবিতান, মার্কেট এবং পাইকারি বাজারগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি নেই বললেই চলে। অনেকেই মাস্ক পরলেও তা রাখছেন থুতনির নিচে। হাঁচি-কাশিও দিচ্ছেন প্রকাশ্য জনবহুল স্থানেই। অনেককে মাস্ক খুলে হাঁচি দিয়ে আবার মাস্ক পরতেও দেখা যায়।  

মার্কেটে ঢুকতে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। তাই মাস্ক পরেই ঢুকছেন সবাই। তবে ভেতরে ঢুকে মাস্ক আর মুখে থাকছে কি না, সেটি তদারকির কোনো ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না।  আর এর ফলে অনেকেই মাস্ক পরে মার্কেটে ঢোকার পর তা খুলে ফেলছেন। যার ফলে তৈরি হচ্ছে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি। 

রাজধানীর নিউ মার্কেট, নীলক্ষেতের বইয়ের দোকান, আজিমপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা ও মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ মার্কেটের সামনে স্থাপিত জীবাণুনাশক টানেলটি এবং হাত ধোয়ার জন্য স্থাপিত বেসিনগুলো কোনো কাজেই আসছে না। বেসিন থাকলেও নেই পানি বা সাবানের কোনো ব্যবস্থা। বড় শপিং মলগুলোর প্রবেশ দ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেওয়া হলেও অন্যান্য মার্কেটের প্রবেশ দ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থাও নেই। করোনা রোধে কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলের নির্দেশনা থাকলেও প্রায় গায়ে গা লাগিয়ে চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে মানুষকে।  

নিউ মার্কেটের ভেতরে এবং ফুটপাতের দোকানগুলোতে হাজারও মানুষের সমাগম হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব মার্কেটে ক্রেতা এবং বিক্রেতাদের অর্ধেকেরও বেশি মানুষের মুখে নেই মাস্ক। বিক্রেতারা যেন ভুলেই গেছেন মাস্ক পরার কথা।  নিউ মার্কেটের ভাসমান ব্যবসায়ী হাসান মিয়া বলেন, কপালে যদি করোনা থাকে তাহলে কেউ ঠেকাতে পারবে না। আমরা গরিব মানুষ, এতকিছু দেখলে না খেয়ে মরতে হবে।

বিক্রেতারা স্বাস্থ্যবিধি মানলেও ক্রেতারাই স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না বলে অভিযোগ করেন আরেক ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, এখানে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষ আসছেন। স্বাস্থ্যবিধি মানতে আমরা তো আর কাউকে জোর করতে পারি না। সবাই বর্তমান পরিস্থিতি বুঝতে পারছে। তারপরও মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে আমরা উৎসাহিত করছি।

খুব দ্রুতই জীবাণুনাশক টানেলগুলো আবার সচল করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট দক্ষিণ ব্লগের সিনিয়র সহ-সভাপতি হাজী মো. শামসুল ইসলাম। তিনি বলেন, মাঝখানে করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ায় এগুলো সক্রিয় করা হয়নি। এখন যেহেতু আবার পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে, এগুলো আবার সচল করা হবে।  এছাড়াও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।


আরএইচটি/এনএফ