মেলা প্রাঙ্গণে মানুষের ভিড়/ ছবি: ঢাকা পোস্ট

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মানুষের ঢল নেমেছে অমর একুশে বইমেলায়। এতে প্রাণ ফিরে পেয়েছে প্রাণের মেলা। দেশে হঠাৎ করে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত কয়েকদিন মেলা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। তবে শুক্রবার (২ এপ্রিল) মেলাজুড়ে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। ছুটির দিন হওয়ায় সব শঙ্কা দূরে ঠেলে মেলায় এসেছেন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। 

বেলা ১১টায় মেলার গেট খোলার পর থেকে দর্শনার্থী ও পাঠকের সংখ্যা কিছুটা কম দেখা গেছে। তবে দুপুরের পর থেকে বাড়তে থাকে মানুষের উপস্থিতি। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই জনারণ্যে পরিণত হয় বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। সব বয়সী মানুষের উপস্থিতি পাল্টে দেয় মেলার রূপ। বইপ্রেমীদের আনাগোনা আর ঘোরাফেরায় মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। তবে মেলায় প্রবেশে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বেশ কড়াকড়ি থাকলেও মাঠে প্রবেশের পর সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানায় আগ্রহী ছিলেন না অনেকেই।

বিভিন্ন প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মীরা জানান, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, মুজিববর্ষ ও ছুটির দিন বিবেচনায় দর্শনার্থী ও পাঠকের চাহিদা মেটাতে প্যাভিলিয়ন ও স্টলে যথেষ্ট বই মজুদ রাখাসহ সব প্রস্তুতি ছিল। তবে দুপুর পর্যন্ত মেলায় আসা দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। বিকেলের দিকে মানুষের উপস্থিতি বেড়েছে।

প্রতিবছর ছুটির দিন সকালে শিশুপ্রহরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। তবে এবার করোনার কারণে শিশুপ্রহরে কোনো আয়োজন নেই। যদিও শুক্রবার শিশুচত্বরও ছিল পাঠক-দর্শনার্থীতে ভরপুর।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষ উপলক্ষে মেলায় আসা দর্শনার্থীদের আগ্রহের শীর্ষে ছিল মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাসের ওপর লেখা বইগুলো।

রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে আসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাশফিন তাসিন বলেন, ‘প্রতিবছর অনেকবার মেলায় আসা হয়। কিন্তু এবার মেলাটা অসময়ে শুরু হওয়ায় একবারও আসা হয়নি। আজই প্রথম এলাম। বেশ কয়েকটি গবেষণামূলক বই কিনেছি। আর ঘুরেও দেখছি।’

মিরপুর থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মেলায় এসেছেন সালমান শিপুল। তিনি বলেন, ‘এ বছর প্রথমবার বইমেলায় এসেছি। অনেক বই কেনার ইচ্ছে আছে। বইমেলার সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় প্রতিদিনই মেলায় আসতাম। এখন সেই সময়টাকে অনেক মিস করি। প্রতিবছরই একাধিকবার বইমেলায় আসার চেষ্টা করি। ভেবেছিলাম এবার বইমেলা হবে না। তবু যে করোনার মধ্যে বইমেলা হচ্ছে এটাই বেশি।’

এদিন বইমেলায় বিক্রিও ছিল অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি। অন্বেষা, অন্যপ্রকাশ, পাঞ্জেরি, প্রথমা, তাম্রলিপি, সিসিমপুর, পার্ল, বাংলা একাডেমি, আদর্শ প্রকাশনীসহ ছোটবড় সব প্যাভিলিয়ন ও স্টলেই ছিল মানুষের ভিড়।

পার্ল পাবলিকেশন্সের বিক্রয়কর্মী ফাহাদ বলেন, সকাল থেকে পাঠক-দর্শনার্থীদের উপস্থিতি কম ছিল। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে বেড়েছে। দুপুরের পর থেকে বই বিক্রিও বেড়েছে অনেক।

প্রকাশকরা প্রত্যাশা করছেন মেলার বাকি দিনগুলোও ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে মুখরিত হবে বইমেলা প্রাঙ্গণ।

কাকলী প্রকাশনীর প্রকাশক নাসির আহমেদ সেলিম বলেন, ‘করোনার মাঝেও বইমেলা হচ্ছে এটাই আমাদের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। যদিও এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় পাঠক-দর্শনার্থীর সংখ্যা অনেক কম। তবু আশার দিক হলো মানুষ মেলায় আসছেন, বই দেখছেন এবং কিনছেন।’ 

আজ ১৬তম দিনে মেলা শেষ হয়েছে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। এদিন নতুন বই এসেছে ১৯৯টি। এর মধ্যে ৩৩টি গল্প, ৩৭টি উপন্যাস, ৭টি প্রবন্ধ, ৫৪টি কবিতা, ৯টি গবেষণা, ৪টি ছড়া, একটি শিশুসাহিত্য, চারটি জীবনী, তিনটি রচনাবলি, ছয়টি মুক্তিযুদ্ধ, দুই বিজ্ঞান, চারটি ভ্রমণ, দুইটি ইতিহাস, একটি রাজনীতি, দুই স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, দুইটি বঙ্গবন্ধু, একটি রম্য/ধাঁধা, তিনটি ধর্মীয়, একটি অনুবাদ, দুইটি সায়েন্স ফিকশন এবং ২১টি অন্যান্য বিষয়ের বই রয়েছে।

শনিবার (৩ এপ্রিল) মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায়, চলবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত।

আরএইচটি/এসএসএইচ/জেএস