রাজধানীজুড়ে তারের জঞ্জাল। নষ্ট হচ্ছে ঢাকার সৌন্দর্য। ঝুলন্ত তারে সয়লাব বিশ্বের অন্যতম এই মেগা সিটি। ইন্টারনেট, কেবল টিভি নেটওয়ার্কসহ নানা ধরন আর রঙের তারের দৃশ্য পাড়া-মহল্লা, বাণিজ্যিক এলাকাসহ সর্বত্রই। বারবার নানান উদ্যোগ-অভিযান চালানো হলেও তার সরেনি রাজধানী থেকে।

তারের জঞ্জাল সরাতে গত বছরের ৫ আগস্ট ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও ১ অক্টোবর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) তার সরানোর অভিযান শুরু করে। এর প্রতিবাদে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) ও কেবল অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) তাদের সেবা বন্ধের ঘোষণা দেয়। পরে কর্মসূচি স্থগিত করে গতবছরের ১৮ অক্টোবর মেয়র তাপসের সঙ্গে বৈঠক করেন সংগঠনের নেতারা। বৈঠকে গত নভেম্বরের মধ্যে ঝুলন্ত তার অপসরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা।

গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচ মাস সময় পেলেও ঝুলন্ত তার অপসারণ করে মাটির নিচে নিতে পারেনি আইএসপিএবি ও কোয়াব। আইএসপিএবি সভাপতি এম এ হাকিম কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের কাজ চলছে। ৩১ মার্চের মধ্যে আমাদের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাঝখানে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় দিবস, অনুষ্ঠান ছিল যে কারণে আমাদের কাজ কিছুটা পিছিয়ে গেছে। চলতি এপ্রিলের মধ্যে আমরা কাজটা অনেক দূর এগিয়ে নিতে পারব। আমাদের ফেস ওয়ানের টার্গেট হচ্ছে মেইন রোডের তারগুলো অপসারণ করে ফেলা। ফেস টুতে সাব রোড বা গলির তার সরানোর কাজ চলবে।

তিনি বলেন, আমাদের কাজটি ডিজিটাল বা বাইনারির মতো। অর্থাৎ হয় শূন্য না হয় এক। ৯৯ শতাংশ কাজ করলেও ওভার হেড কেবল রিমুভ হবে না। শতভাগ কাজ করলে বাইনারি হিসেবে ওয়ান হবে। তাই এখান কত শতাংশ কাজ হয়েছে তা বলা কঠিন। আমরা প্রথমে কিছু রোড ক্রসিং করে দিচ্ছি। যখন এই কাজ হয়ে যাবে তখন আমরা মেইন রোডের ওভার হেড কেবলগুলো কেটে ফেলব।

এম এ হাকিম বলেন, আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সড়ক খনন ক্ষতিপূরণসহ ১৪৬ স্থানে ঝুলন্ত তার মাটির নিচে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে ডিএসসিসি। সেই অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। উত্তর সিটিরও বেশ কিছু জায়গায় আমারা কাজ করেছি কিন্তু ডিএনসিসি থেকে পুরোপুরি কাজ করার আমারা এখনও অনুমতি এখনও পাইনি। অনুমতি পেলেই আমরা উত্তরেও কাজ করব।

ঝুলন্ত তার অপসারণের কার্যক্রম বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঝুলন্ত তার অপসারণের কাজ চলছে। শেষ হতে কিছুটা সময় লাগবে। রাতারাতি এ কাজ শেষ করা সম্ভব না। কারণ ঢাকা শহর অনেক বড়।  এই কাজ শেষ করতে আরও কিছু সময় দিতে হবে।

জানা গেছে, আইএসপিএবি ও কোয়াবের আবেদনের প্রেক্ষিতে সড়ক খনন ক্ষতিপূরণসহ ১৪৬ স্থানে ঝুলন্ত তার মাটির নিচে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে ডিএসসিসি। ১৪৬টি স্থানের মধ্যে যেগুলো দক্ষিণ সিটির আওতাভুক্ত সড়ক, সেগুলোতে এইচডি পদ্ধতিতে রোড ক্রসিং করার জন্য খননের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।  এসব কাজ সম্পন্ন ও তদারকির জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে ডিএসসিসি। ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলীকে সভাপতি, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী প্রকৌশলীকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। এছাড়া অপর সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রতিনিধিকে।

গত বছরের ১৮ অক্টোবর ডিএসসিসি নগর ভবনে আইএসপিএবি ও কোয়াব নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ডিএসসিসি মেয়র তাপস ঘোষণা দিয়েছিলেন, ২০২০ সালের নভেম্বরের মধ্যেই ইন্টারনেট ও ক্যাবল টেলিভিশনের সব ঝুলন্ত তার মাটির নিচে নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়েছেন।

এর আগে ঝুলন্ত তার অপসারণে দুই সিটি করপোরেশন অভিযানে নেমেছিল। তখন এর প্রতিবাদে সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখার কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছিল আইএসপিএবি ও কোয়াব। সেসময় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে স্থায়ী সমাধান না করা পর্যন্ত কোনো ঝুলন্ত ক্যাবল অপসারণ না করাসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছিল সংগঠন দুটি।

তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে- আইএসপিএপি, কোয়াব, বিটিআরসি, এনটিটিএন ও সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ে ‘লাস্ট মেইল ক্যাবল’ স্থাপন করা হয়েছে কি না- তা নিশ্চিত করতে একটি কমিটির মাধ্যমে সরেজমিনে তদন্তের ব্যবস্থা করা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাসাবাড়ি, অফিস ও ব্যাংকসহ সব পর্যায়ে ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভি সেবার মূল্য নির্ধারণ করা। গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভি সেবা স্বল্পমূল্যে দেয়ার লক্ষ্যে এনটিটিএনের মূল্য সরকারের মাধ্যমে নির্ধারণ করা এবং গ্রাহক পর্যায়ে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দানের নিশ্চয়তার পক্ষে এনটিটিএনগুলো সার্বিক সক্ষমতা আছে কি-না তা যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা।

এএসএস/ওএফ