করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের দেওয়া কঠোর নির্দেশনা লকডাউনের নামে ক্র্যাকডাউন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের সমন্বয়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূর।

সোমবার (৫ এপ্রিল) পল্টনের জামান টাওয়ারে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। ছাত্র, যুব, শ্রমিক অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার, হয়রানি ও রোববার রাতে নূরকে গুমের চেষ্টাসহ সার্বিক বিষয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

নুরুল হক নূর বলেন, বর্তমানে যে সময় সরকার লকডাউন দিয়েছে তাতে আমার মনে হচ্ছে এটা তারা রাজনৈতিক উদ্দেশে দিয়েছে। আপনারা জানেন মোদিবিরোধী আন্দোলনের রেশ এখনও কাটেনি। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের রাস্তায় নেমে আসার যে প্রবণতা সেটাকে থামাতে সরকার লকডাউনের নামে ক্র্যাকডাউন দিয়েছে।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সরকার ১০ দিনব্যাপী প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠানমালা পালন করেছে। সেই সময় সমস্যা হয়নি। সরকার হঠাৎ করে লকডাউন দিয়েছে। এটা রহস্যজনক বিষয়।

নূর বলেন, লকডাউনের দুদিন আগে হেফাজতের একজন প্রভাবশালী নেতাকে সোনারগাঁয়ে অবরুদ্ধ করে কাণ্ড ঘটানো হয়। তারপরের দিন আমাকে গুমের চেষ্টা করা হলো। আরও দুতিন দিন আগে ফেসবুক পোস্টে আমি জানিয়েছিলাম, বর্তমান পরিস্থিতিতে মোদি বাংলাদেশে এসে সেভাবে সম্মান পাননি। বাংলাদেশে ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড রকমের ক্ষোভ মানুষের মধ্যেই আছে। সে কারণে ভারত বাংলাদেশ সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে এদেশের ইসলামপন্থীদের শক্তি ভেঙে দেওয়া এবং কওমি মাদরাসা বন্ধ করে দেওয়া। দ্বিতীয়টা ছিল, ভিপি নূরকে গুম করে মেরে ফেলা। কারণ তাকে কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সরকারের উচিত ছিল আমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু সেটা আমি পাইনি।

লিখিত বক্তব্যে নূর বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মতো বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদযাপন অনুষ্ঠান সরকার দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও জনগণকে সম্পৃক্ত না করে সংকীর্ণ দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে উদযাপন করেছে। এমনকি ভারতের উগ্র সাম্প্রদায়িক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমনের বিরোধিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও পুলিশ বিনা উস্কানিতে দফায় দফায় সশস্ত্র হামলা ও গুলি চালায়। এতে প্রায় ৭৪২ জন আহত, ১৯ জন নিহত ও ১৮২ জন গ্রেফতার হয়েছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এমন পক্ষপাতমূলক ও জঘন্য কাজ স্পষ্টতই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী।

গুমের কথা উল্লেখ তিনি বলেন, গতকাল গুলশান থেকে বাসায় ফেরার পথে সাদা পেশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে একদল লোক উত্তর বাড্ডা এলাকা থেকে আমাকে অপহরণের চেষ্টা করে। রাস্তায় যানজট থাকায় গাড়ি চলার মতাে অবস্থা ছিল না, আমি গাড়ির দরজা ধাক্কা দিয়ে বাইরে বের হয়ে চিৎকার করে লোকজন জড়ো করলে তারা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে পোশাক পরা কিছু ডিবি ও পুলিশের লোকজন এসে ছাত্র অধিকার পরিষদ যুগ্ম আহ্বায়ক বিন ইয়ামিন মোল্লা, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ক্রীড়া সম্পাদক আরেফিন ফরহাদ ও পরিচিত ছোট ভাই শিপনকে গ্রেফতার করে। এর আগেও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে শাহবাগ থানায় জিডি করে কোনো প্রতিকার পাইনি।

নূর গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তি ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি মোদিবিরোধী আন্দোলনে সহিংসতায় সরকারি দলের লােকজন জড়িত থাকলেও ভিন্নমত ও বিরোধীদের দমনে মিথ্যা মামলা ও ভিত্তিহীন অভিযোগে অসংখ্য মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার নেতাকর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদের নামে থানায় অমানবিক নির্যাতন করে মিথ্যা ও বানোয়াট স্বীকারোক্তি নেওয়া হচ্ছে। যা আইন ও সংবিধান পরিপন্থী।

সংবাদ সম্মেলনে গ্রেফতার হওয়া বিন ইয়ামিন মোল্লার বাবা মো. রফিকুল ইসলাম মোল্লা ছেলের মুক্তি দাবি করেন।

এমএইচএন/এসকেডি