‘হয় বাঁচাও নাইলে নিয়ে যাও, এত কষ্ট আর ভালো লাগে না’ ঢাকা শিশু হাসপাতালের করোনা ইউনিটের সামনে এভাবেই কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন মরণব্যাধি ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত আরাফাতের (৪) মা হারিজা বেগম।

কুমিল্লা থেকে হারিজা বেগম এসেছেন ঢাকা শিশু হাসপাতালে একমাত্র ছেলে আরাফাতের চিকিৎসা করাতে। গত ৭ মাস ধরে ১০ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে আরাফাতের। হারিজা বেগমের স্বামী মকবুল হোসেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পিওনের চাকরি করেন।

হারিজা বেগম বলেন, এখন পর্যন্ত ছেলের চিকিৎসায় ১২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। কিছুতেই সুস্থ হচ্ছে না। দিনের পর দিন অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। সম্প্রতি আমাদের ওয়ার্ডে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ায় চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে। করোনা আছে কি-না টেস্ট করার পরে যদি নেগেটিভ আসে তাহলে চিকিৎসা আবার চলবে।

বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঢাকা শিশু হাসপাতালে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, করোনা হাসপাতালে ১২টি বেডের একটিও খালি নেই। ক্যান্সার ওয়ার্ডে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় বর্তমানে কোনো রোগীরই চিকিৎসা হচ্ছে না।

ঢাকা শিশু হাসপাতালে দেড় মাস ধরে অবস্থান করছেন তসলিমা বেগম

ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত আরাফাতের মা হারিজা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, করোনার কারণে চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে। কি যে করব বুঝতে পারছি না। একমাত্র ছেলে আমার ৭ মাস ধরে ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। কেমোথেরাপি দিতে দিতে কানের দুই পর্দা ফেটে গেছে, মলদ্বার পচে গেছে, লিভার ছোট হয়ে গেছে। গরিব মানুষ ঠিক মতো খেতেও পারি না চিকিৎসা করাবো কী দিয়ে। আর ধৈর্যে কুলায় না ‘হয় বাঁচাও নাইলে নিয়া যায়ও, এত কষ্ট ভালো লাগে না’ বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

কথা হয় ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত আরেক শিশু আতিকুল ইসলামের (৭) মা তাসলিমা বেগমের সঙ্গে। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৩ মাস আগে আমার ছোট ছেলের শরীরে ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়ে। সাতক্ষীরায় দেড় মাস চিকিৎসা করেছি। এরপর ঢাকায় দেড় মাস থরে চিকিৎসা চলছে। ছেলের বাবা কৃষি কাজ করেন। ওয়ার্ডে করোনা রোগী পাওয়ায় চিকিৎসা বন্ধ রয়েছে। তাই করোনার নমুনা দিতে আসলাম। কীভাবে ছেলের চিকিৎসা করাবো বুঝতে পারছি না। অনেক সময় আলু ভর্তা ভাত কেনারও টাকা থাকে না। আমাদের মত গরিব মানুষের কেন আল্লাহ এমন রোগ দেয়?

ঢাকা শিশু হাসপাতালের করোনা ইউনিটের চিকিৎসক ডা. সাদিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এখানে ১২টি বেড আছে। সব বেডেই রোগী। ক্যান্সার ওয়ার্ডে ২০টি বেড থাকার কথা থাকলেও এখনো আরও ৮টি বেড আসেনি। গত ১ সপ্তাহ ধরে রোগী অনেক বেড়েছে। আমাদের এখানে আইসিইউ নেই। তাই কোনো রোগীর আইসিইউ সাপোর্ট লাগলে অন্য হাসপাতালে রেফার্ড করে দেই।

করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দিতে দাঁড়িয়ে আছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা

ঢাকা শিশু হাসপাতালের একান্ত সচিব সাইদুল ইসলাম বলেন, আমার গত সপ্তাহে করোনা পজিটিভ এসেছে। আজও আমি করোনা টেস্টের নমুনা দিয়েছি। পরীক্ষার ফলাফল আসার আগে কেন অফিস করছেন এমন প্রশ্ন করলে কোনো উত্তর দেননি তিনি।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. প্রবীর কুমার সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের ডিজি মহোদয়সহ অনেক চিকিৎসক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারপরও আমরা চিকিৎসা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছি।

এসএএ/এসকেডি