মডেল একাডেমি মিরপুর

করোনা আক্রান্ত সদস্যদের জন্য মিরপুর-১ এর মডেল একাডেমিতে আইসোলেশন সেন্টার করার উদ্যোগ নিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। তবে মিরপুরের পাইকপাড়ার ওই এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় স্কুল ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে এ নিয়ে আপত্তি তোলা হয়েছে।

র‌্যাবকে এখানে আইসোলেশন সেন্টার করার অনুমতি না দেওয়ার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও পাইকপাড়া সরকারি কলোনি কল্যাণ সমিতি।

তাদের দাবি, এ কলোনিতে ৪৬০টি পরিবার বসবাস করছে। এছাড়া স্কুলে চার হাজারে বেশি শিক্ষার্থী পড়াশুনা করে। বর্তমান অনলাইন ক্লাসের জন্য শিক্ষকদের এবং অ্যাসাইনমেন্টের জন্য শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের স্কুলে আসতে হয়। এছাড়াও এসএসসির ফরম পূরণের কাজও চলছে। এ অবস্থায় এখানে করোনা আইসোলেশন সেন্টার হলে এলাকাবাসী ও শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়বে।

জানা গেছে, গত ৩১ মার্চ র‌্যাব-৪ এর পরিচালকের পক্ষে উপ-অধিনায়ক মেজর মো. কামরুল হোসেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে মডেল একাডেমিতে করোনা আক্রান্ত র‌্যাব সদস্যের জন্য আইসোলেশন সেন্টার করার অনুমিত চান।

চিঠিতে বলা হয়, সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে করোনা মোকাবিলা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ রাষ্ট্রীয় কাজ করতে গিয়ে র‍্যাবের অনেক সদস্য করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্ত সদস্যদের জন্য চিকিৎসা প্রদানের জন্য অস্থায়ীভাবে একটি আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন করা জরুরি। তাই মডেল একাডেমি স্কুলটি কাছাকাছি হওয়ার এখানে আইসোলেশন সেন্টার করার জন্য অনুমতি চাওয়া হচ্ছে।

এরপর মডেল একাডেমি স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভাশীষ কুমার বিশ্বাস ও পাইকপাড়া সরকারি কলোনি কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুল হক এখানে আইসোলেশন সেন্টার করতে অনুমতি না দেওয়ার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের কাছে আবেদন করে।

আবেদনে প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘মডেল একাডেমিতে প্রায় চার হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। বর্তমানে বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ক্লাস চালু রয়েছে এবং ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া ও নেওয়া হয়। এছাড়া ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফর্ম ফিল-আপ ও জেএসসি পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম এবং শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে একটি ৬ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।’

গত বছর স্থানীয় সংসদ সদস্য আসলামুল হকের সম্মতিতে এ স্কুলে র‍্যাব-৪ আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন করেছিল। অভিযোগ আছে, আইসোলেশনে থাকা বেশিরভাগ সদস্য নিয়মনীতি না মেনে ঘোরাফেরা করে। আবাসিক এলাকায় হওয়ায় এ নিয়ে কলোনিতে বসবাসকারী শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। পরবর্তী সময়ে অনেক চেষ্টার পর বিদ্যালয় থেকে এ আইসোলেশন সেন্টার সরানো হয়।

তবে এবার ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকায় করোনা আক্রান্তদের জন্য বিদ্যালয়ে আইসোলেশন কেন্দ্র স্থাপন না করার জন্য কলোনিবাসী, শিক্ষক, শিক্ষার্থীর পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে মডেল একাডেমির প্রধান শিক্ষক শুভাশীষ কুমার বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘স্কুলটি একটি কলোনির মধ্যে অবস্থিত। এখানে সাড়ে ৪০০ পরিবার বসবাস করে। আইসোলেশন সেন্টার হলে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করবে। গত বছর যখন আইসোলেশন সেন্টার করা হয়েছিল আক্রান্ত র‌্যাব সদস্যরা নিয়মনীতি মানেননি। যখন তখন বের হয়ে ঘোরাফেরা করতো। এতে আমার স্কুলের চারজন কর্মী করোনায় আক্রান্ত হন। এবার যখন র‌্যাব থেকে ফের আবেদন করেছে, তা জানার পর স্থানীয় এমপির পরামর্শে স্কুল ও কলোনিবাসীর পক্ষ থেকে তা না করার অনুরোধ করেছি।’

তিনি বলেন, ‘দারুসসালাম কলেজ ও মিরপুর বাঙলা কলেজে এটা করা যেতে পারে। কারণ ওই এলাকা আবাসিক না। এরপরও র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক গত বছরের মতো নিয়মনীতির ব্যত্যয় হবেনা বলে বলে আমাকে জানিয়েছেন।’

এনএম/এফআর