ভর্তি ছাড়া করোনা পরীক্ষার সুযোগ নেই ঢাকা মেডিকেলে!
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতি ও সচেতনতা কাজ করছে। প্রতিদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শত শত রোগী করোনা পরীক্ষার জন্য ভিড় করছেন। কেউ মাস্ক পরছেন আবার কেউ মাস্ক ছাড়াই হাসপাতালে আসা-যাওয়া করছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, ভর্তি ছাড়া এখানে কোনো রোগীর করোনা পরীক্ষার সুযোগ নেই।
রোগীরা বলছেন, করোনা সংক্রমণের প্রথমদিকে ঠান্ডা, কাশি ও জ্বরের কোনো লক্ষণকে পাত্তা দেননি। অবহেলা করেছেন, এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে— এমনটি ভেবেছেন। তবে এখন বিষয়টি স্বাভাবিক হিসেবে নিচ্ছেন না। কোনো লক্ষণ দেখা দিলে পরীক্ষার জন্য চলে আসছেন। কিন্তু পরীক্ষা দিতে ঢাকা মেডিকেলে এসে বিড়ম্বনায় পড়ছেন তারা।
ঢাকা মেডিকেলে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা মোকাবিলায় সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। এখন করোনার ধরন পরিবর্তন হচ্ছে, অনেক দেশে এমনটি দেখা দিচ্ছে। আমাদের দেশেও সেটা হচ্ছে, কিন্তু আমরা বুঝতে পারছি না। তাই সবার স্বাস্থ্যবিধি মানা জরুরি।
সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, চিকিৎসক ও রোগীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে করোনা পরীক্ষা করতে এখানে এসেছেন দুলাল মিয়া। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘চারদিন হলো শরীরে জ্বর, সঙ্গে ঠান্ডাও আছে। প্রথম দুদিন ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খেয়েছি। কিন্তু ভালো হয়নি দেখে ঢাকা মেডিকেলে করোনা পরীক্ষার জন্য চলে আসি। এসে দেখি, ভর্তি ছাড়া কোনো টেস্ট হচ্ছে না। তাই ভর্তির জন্য চেষ্টা করছি।’
রাজধানীর বাড্ডা থেকে স্বামীকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে এসেছেন জয়নব বেগম। তিনি বলেন, খুব ভোরে এখানে এসেছি। কিন্তু ভর্তি ছাড়া করোনার পরীক্ষা করানো হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ বলছে পিজিতে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) যেতে। চিন্তায় পড়েছি। এখানে ভর্তি করব, নাকি অন্য কোথাও নিয়ে যাব। আউটডোর খুলে দিলে আমাদের জন্য ভালো হতো।
চাঁদপুরের কচুয়া থেকে এসেছেন আব্দুস সাত্তার। স্ট্রোক করে চারদিন আগে ভর্তি হন ঢাকা মেডিকেলে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার এক স্বজনের অভিযোগ, ভর্তি হওয়ার পর করোনার উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসক পরীক্ষা করাতে বলেন। কিন্তু করোনার ফর্ম হারানোর কারণে এখন পরীক্ষা নিচ্ছে না। এক জায়গায় গেলে অন্য জায়গায় যেতে বলে। সেখানে গেলে বলে, ব্যস্ত আছি, এখন কথা বলার সুযোগ নাই। শেষমেশ বলছে, প্রশাসন থেকে সই আনতে। সই আনার পরও তারা নমুনা নিচ্ছে না।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের সার্ভিস প্রমোটর (তথ্যসেবা কেন্দ্র) সুজন সরকার বলেন, ‘আমাদের ওপর অনেক চাপ যাচ্ছে। ভর্তি ছাড়া অনেক রোগী এখানে করোনা পরীক্ষা করাতে আসছেন। অথচ ভর্তি ছাড়া কোনো রোগীকে এখন পরীক্ষা করা হচ্ছে না। জরুরি হলে ভর্তি করে পরীক্ষা করানো হচ্ছে। অনেক সুস্থ রোগীও আসেন পরীক্ষার জন্য, কিন্তু যেসব রোগীর অবস্থা খারাপ তাদের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হচ্ছে। গণহারে পরীক্ষা করলে যাদের বিশেষ প্রয়োজন তারা বঞ্চিত হবেন।
এ প্রসঙ্গে ঢামেকের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সুলতানা শাহানা বানু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এখানে বরাবরই রোগীদের চাপ। করোনার উপসর্গ নিয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, শুধুমাত্র তাদের পরীক্ষা করানো হচ্ছে। বহির্বিভাগে করোনা পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে, এখনও খোলা হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনা নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে এখন তেমন ভয়-ভীতি নেই। তারা পাত্তা দিচ্ছেন না। কিন্তু করোনা নীরব ঘাতক হয়ে দাঁড়াচ্ছে, সেটা সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছেন না। উপসর্গ নানাভাবে দেখা দিচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত অনেক রোগী হাসপাতালে আসার আগেই মারা যাচ্ছেন। এখন তাদের করোনা ছিল কি-না, আপনি কী করে বুঝবেন? তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন, নীরবে তারাও আক্রান্ত হতে পারেন। অথচ তারা সেটা বুঝতে পারছেন না, অবহেলা করছেন।’
বিজ্ঞাপন
অধ্যাপক সুলতানা বলেন, এখন স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই। করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধিতে যে নির্দেশনা দেয়া আছে সেগুলো মেনেই আমাদের চলতে হবে।
আউটডোর বা ইনডোর, সরাসরি এমন কোনো নির্দেশনা নেই। কোথাও নেই। আমাদের যতটুকু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তা নিয়েই আমরা কাজ করছি। জরুরি রোগী বা ভর্তি রয়েছেন যারা, তাদের যদি করোনার উপসর্গ দেখে দেয়, আমাদের চিকিৎসকরা দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছেন। সরকারি যে নির্দেশনা রয়েছে, সেটা আমরা সবাই মেনে চলছি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক
বিজ্ঞাপন
ঢাকা মেডিকেলে করোনা রোগীদের চাপ এবং আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) বেড সম্পর্কে তিনি বলেন, গত তিন সপ্তাহ ধরে ভর্তি হওয়া রোগীর হার নিচের দিকে। তবে আইসিইউ বেড খুব একটা ফাঁকা থাকছে না। সারাদেশ থেকে আশঙ্কাজনক রোগী এখানে আসছেন। যতক্ষণ আইসিইউতে রাখার প্রয়োজন হয় ততক্ষণ তাদের আইসিইউ সাপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া এসডিও বেডের প্রয়োজন হলে সেই সাপোর্টও দেয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা সাত হাজার ৪৭৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনাক্ত হয়েছেন আরও ৯৩২ জন। মোট শনাক্ত পাঁচ লাখ দশ হাজার ৮০ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৩৫৭ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন চার লাখ ৫৩ হাজার ৩১৮ জন।
কবির হোসেন/এমএআর/