পৌরসভা নির্বাচন
নির্বাচন সাকসেসফুল হয়েছে: ইসি সচিব
প্রথম ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন ভোটাররা - সংগৃহীত ছবি
প্রথম ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে কমপক্ষে ৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে মনে করছেন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর। তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত যে রিপোর্ট পেয়েছি তাতে নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এক কথায় নির্বাচন সাকসেসফুল হয়েছে।
সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬ টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে সচিব তার নিজ কার্যালয়ে নির্বাচন পরবর্তী ব্রিফিং করেন। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
সচিব বলেন, আজ গণমাধ্যম এবং আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকে যে তথ্য পেয়েছি তাতে মনে হচ্ছে ৬০ শতাংশের নিচে ভোট পড়েনি। কোথাও কোথাও ৭০ বা ৭৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে আমি মনে করছি।
তিনি বলেন, প্রথম ধাপের নির্বাচন আমাদের দৃষ্টিতে খুবই ভালো হয়েছে। ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এমনকি সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও অনেক ভোটার ভোট দেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
বিজ্ঞাপন
নির্বাচন চলাকালে সীতাকুণ্ড ও পঞ্চগড়ের সহিংস ঘটনা প্রসঙ্গে সচিব বলেন, পঞ্চগড়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার গাড়ি যাওয়ার জন্য পুলিশ রাস্তা থেকে লোকজন সরতে বলে। এতে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ভাঙচুর হয়। এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।
তিনি বলেন, সীতাকুণ্ডে দুষ্কৃতিকারীরা ইভিএম কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে। তারা সফল হতে পারেনি। টানাটানিতে ইভিএমের মনিটর মাটিতে পড়ে ভেঙে যায়। পরে সেটি রিপ্লেস করে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ভোট নিতে কোনও সমস্যা হয়নি। এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ধামরাই পৌরসভা নির্বাচনের সময় গণমাধ্যমকর্মীর ওপর হামলা ও মোবাইল কেড়ে নেয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনও অভিযোগ আমাদের কাছে এখনও আসেনি। আপনাদের কাছ থেকে প্রথমে খবরটি শুনলাম। এ বিষয়ে আমরা খবর নেব। এ বিষয়ে প্রতিবেদন পেলে আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।
এদিকে খুলনার চালনা পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী মারা যাওয়ায় সেখানকার শুধু মেয়র পদের নির্বাচনী ফলাফল আপাতত স্থগিত করেছে ইসি।
রংপুরের বদরগঞ্জের একটি কেন্দ্রে ভোটারদের লাইন
এ বিষয়ে মো. আলমগীর বলেন, আমরা খবর পেয়েছি মৃত প্রার্থীর এজেন্ট লিখিতভাবে জানিয়েছেন দুপুর ৩ টা ৩৩ মিনিটে প্রার্থী মারা যান। কিন্তু মেডিকেল সার্টিফিকেটে মৃত্যুর সময় দেয়া আছে ৩ টা ৫০ মিনিট। সেখানে ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে। কমিশন পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
প্রথম ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে ২৪টি পৌরসভায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটগ্রহণ শুরু হয় সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল ৮টায়। এর মধ্য দিয়ে ২৪ পৌরসভায় মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ভোটের লড়াই শুরু হয়। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলে।
২৪টি পৌরসভায় মেয়র পদে ৯৩ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ২৬৬ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৮০১ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। প্রথম ধাপের এ নির্বাচনী লড়াইয়ে অংশ নিয়েছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। ২৪টি পৌরসভার মধ্যে ২৩টিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। রাজশাহীর পুঠিয়ায় মেয়র পদে বিএনপির কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।
ইসি জানিয়েছে, নির্বাচন উপলক্ষে রোববার (২৭ ডিসেম্বর) প্রত্যেক কেন্দ্রে ইভিএম পাঠানো হয়। ২৪টি পৌরসভায় ভোটকেন্দ্র ৩১৯টি। মোট ভোটার সংখ্যা ৬ লাখ ২৪ হাজার ৮০৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩ লাখ ৭ হাজার ৩৭ জন এবং নারী ভোটার ৩ লাখ ১৭ হাজার ৭৭০ জন।
যে ২৪ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ হয়েছে
পঞ্চগড় জেলার পঞ্চগড় সদর; ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ; দিনাজপুরের ফুলবাড়ী; রংপুরের বদরগঞ্জ; কুড়িগ্রামের কুড়িগ্রাম সদর; রাজশাহীর পুঠিয়া ও কাটাখালী; সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর; পাবনার চাটমোহর; কুষ্টিয়ার খোকসা; চুয়াডাঙ্গার চুয়াডাঙ্গা সদর; খুলনার চালনা; বরগুনার বেতাগী; পটুয়াখালীর কুয়াকাটা; বরিশালের উজিরপুর ও বাকেরগঞ্জ; ময়মনসিংহের গফরগাঁও; নেত্রকোনার মদন; মানিকগঞ্জের মানিকগঞ্জ সদর; ঢাকার ধামরাই; সুনামগঞ্জের দিরাই; মৌলভীবাজারের বড়লেখা; হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ এবং চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ভোটগ্রহণ হয়েছে।
গত ২২ নভেম্বর প্রথম ধাপে ২৫টি পৌরসভার তফসিল ঘোষণা করে ইসি। কিন্তু গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার একজন প্রার্থী মৃত্যুবরণ করায় সেখানে নির্বাচন স্থগিত করে ইসি।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের ভোটের তারিখ
দেশে পৌরসভা রয়েছে মোট ৩২৯টি। প্রথম ধাপের মাধ্যমে পৌরসভায় সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হলো। ইতোমধ্যে তিন ধাপের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে ইসি। দ্বিতীয় ধাপে আগামী ১৬ জানুয়ারি ৬১ পৌরসভায় এবং তৃতীয় ধাপে ৬৪ পৌরসভায় ৩০ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, করোনা মহামারির মধ্যেও ইভিএমের মাধ্যমে পাঁচটি সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ, ঢাকা-৫ আসনে ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং নওগাঁ-৬ আসনে ৩৬ দশমিক ৪৯ শতাংশ ভোট পড়ে।
সর্বশেষ ঢাকা-১৮ আসনের উপনির্বাচনে ভোট দিয়েছেন মাত্র ১৪ শতাংশ ভোটার। তবে সিরাজগঞ্জ-১ আসনে ৫১ দশমিক ৭৬ শতাংশ ভোট পড়ে। এছাড়া ব্যালট পেপারে যশোর-৬ আসনে ভোট পড়ে ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ। বন্যার মধ্যেও বগুড়া-১ আসনে ভোট দেয় ৪৫ দশমিক ৫ শতাংশ ভোটার। দুটি আসনে গড়ে ৫৫ শতাংশ ভোট পড়েছে।
এসআর/এইচকে