স্কুল কলেজের শিক্ষকদের ইভিএমের মাস্টার ট্রেনার বানাবে ইসি
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে ৩০০ আসনের সবকটিতেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে জাতীয় নির্বাচনে একযোগে ইভিএম ব্যবহারের সক্ষমতা নেই বর্তমান কমিশনের। এজন্য ইভিএম ব্যবহারে সারাদেশের স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের মাস্টার ট্রেনার বানানোর কথা ভাবছে ইসি।
ইভিএম ব্যবহারের লক্ষ্যে টেকসই নীতিমালা নির্ধারণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে ইসি। এর মাধ্যমে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট ও স্কুল-কলেজের আইসিটিতে দক্ষ শিক্ষকদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে মাস্টার ট্রেনার হিসেবে প্রস্তুত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সম্প্রতি ইসির এক সভায় এসব বিষয়ে আলোচনা হয়।
বিজ্ঞাপন
সভায় ইভিএম প্রকল্প পরিচালক কর্নেল মো. কামাল উদ্দিন (পিএসসি, ইঞ্জিনিয়ার্স) জানান, প্রকল্পের আওতায় দেড় লাখ ইভিএম মেশিন কেনা হয়েছে। এর মধ্যে ৮২ হাজার ইভিএম মাঠ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। ৩৪ হাজার ইভিএম আমাদের কাছে রয়েছে। এছাড়া চলতি অর্থবছরে আরও ৩৪ হাজার মেশিন ক্রয় করার পরিকল্পনা রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, বর্তমানে পর্যাপ্ত ইভিএম এবং দক্ষ জনবল না থাকায় ইসি সীমিত পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করছে। একযোগে সারাদেশে ইভিএম ব্যবহারের ক্ষমতা বর্তমানে ইসির নেই। আগামীতে সারাদেশে একযোগে ইভিএম ব্যবহার করার সক্ষমতা অর্জনের জন্য কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিজ্ঞাপন
সভায় জানানো হয়, গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একাদশ সংসদের চারটি আসনের উপনির্বাচন এবং কিছু ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ পাশের দেশ ভারতে সবধরনের ভোটে ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে। বাংলাদেশের ইসি চায়, ব্যালট পুরোপুরি বাদ দিয়ে ইভিএমে সব ভোট করতে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ইভিএম প্রকল্পের মোট ব্যয় তিন হাজার ৮২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে এডিডিতে বরাদ্দ রয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৩৮ কোটি টাকা এবং ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের অনুকূলে মোট ব্যয় হয়েছে দুই হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা। যা মোট ব্যয়ের ৭৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
এর আগে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছিলেন, ভবিষ্যতে সব নির্বাচনই ইভিএমে হবে। এ জন্য আইনগত কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। যদিও বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দল এটির বিরোধিতা করলেও সিইসি বলেছেন, ‘এই পরিকল্পনা থেকে সরে আসার আর কোনো সুযোগ নেই। ইভিএম কোনো অনলাইন ব্যবস্থা নয়। এই যন্ত্র হ্যাক করা সম্ভব নয়। এতে ভোট দিতে কোনো ধরনের অস্বস্তিতে পড়তে হবে না ভোটারদের। এই ইভিএম আগেরগুলোর চেয়ে উন্নতমানের। কোনোভাবেই হ্যাক করা সম্ভব নয়। এছাড়া এগুলো ব্যবহারের ফলে দ্রুততার সঙ্গে ফল প্রকাশ করা যাবে। একইসঙ্গে ভোটের আগের রাতে সিল মারাও বন্ধ হবে।’
২০১০ সালে এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন কমিশন দেশে ভোট ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে ইভিএমের সূচনা করে। সে সময় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কাছ থেকে এই ভোটযন্ত্র তৈরি করে নেওয়া হয়েছিল। কয়েকবছর ভালো ফল পাওয়া গেলেও ২০১৫ সালের রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় একটি মেশিনে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। সেই মেশিনটি আর সারাতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। এমনকি ত্রুটি হওয়ার কারণও উদ্ধার করতে পারেনি। এরপর কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৬ সালে এমন পরিস্থিতিতে বুয়েটের তৈরি মেশিনগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নষ্ট করে ফেলে। একইসঙ্গে নতুন এবং উন্নতমানের ইভিএম তৈরির নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। ওই সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় বর্তমান কে এম নূরুল হুদা কমিশন প্রায় ২০ গুণ বেশি দামে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে উন্নতমানের ইভিএম তৈরি করে নিচ্ছে।
এসআর/এফআর/জেএস