বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবে তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল আছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

খালেদা জিয়ার করোনায় আক্রান্তের বিষয়টি রোববার (১১ এপ্রিল) দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতর নিশ্চিত করলেও বিএনপির পক্ষ থেকে বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করা হয়। পরে বিকেলে সংবাদ সম্মলনে এসে মির্জা ফখরুল বলেন, করোনায় আক্রান্ত হলেও বিএনপি চেয়ারপারসনের বর্তমান অবস্থা স্থিতিশীল।

তিনি বলেন, ‘গতকাল তার নমুনা নেওয়া হয়। আজ (রোববার) রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। দেশবাসীকে আহ্বান জানাব, তার রোগমুক্তির জন্য দোয়া করবেন। তিনি (খালেদা জিয়া) নিজেও দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।’

রোববার (১১ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪টার পর গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম।

তিনি আরও বলেন, ‘দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান থাকবে, দেশনেত্রীর রোগমুক্তির জন্য পরম করুনাময়ের কাছে দোয়া চাইবেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোয়া করবেন।’

খালেদা জিয়া নিজেও দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন, বলেন মির্জা ফখরুল

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এফ এম সিদ্দিকীর অধীনে তার করোনার চিকিৎসা শুরু হয়েছে বলেও জানান মির্জা ফখরুল। বলেন, ‘তিনি সম্পূর্ণরূপে স্টেবল আছেন। ভালো আছেন। তার কোনো টেম্পারেচার নেই। অন্য কোনো উপসর্গও নেই। চিকিৎসা শুরু হয়েছে ইতোমধ্যে। আশ্বস্ত করতে চাই, ব্যক্তিগত চিকিৎসক যারা আছেন, তাদের তত্ত্বাবধানে তিনি (খালেদা জিয়া) আছেন।’

চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান মির্জা ফখরুল। ‘যদি কোনো প্রয়োজন হয়, সেই অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে’— বলেন মির্জা ফখরুল।

রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনের একটি ছবি আসে। সেখানে খালেদা জিয়া ‘করোনা পজিটিভ’ বলে উল্লেখ করা হয়। ওই প্রতিবেদনে থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করলে তা স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটের একটি প্রতিবেদন দেখায়। যেখানে রোগীর নাম বেগম খালেদা জিয়া এবং আইসিডিডিআরবি’তে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করে করোনাভাইরাস পজিটিভ পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান রোববার দুপুরে বলেন, আমাদের কাছে যে রিপোর্ট এসেছে, তাতে ওনার (খালেদা) করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে।’ শনিবারই নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে এ খবরের সত্যতা প্রথমে অস্বীকার করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ম্যাডামের করোনা পরীক্ষাই করা হয়নি। তার নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে।’

গত বছর ২৫ মার্চ ৭৬ বছর বয়সী খালেদা জিয়ার সাজা শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য স্থগিত করা হয়

‘পজিটিভ রিপোর্ট’ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শায়রুল কবির বলেন, ‘যারা বলছেন তিনি করোনা পজিটিভ, তাদেরকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করুন। আমি জানি ম্যাডামের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে।’

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আপাতত গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় থেকেই চিকিৎসা নেবেন তিনি। কারণ তার চিকিৎসার তত্ত্বাবধানে আছেন লন্ডনে অবস্থানরত বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান। তার সঙ্গে খালেদা জিয়ার করোনার বিষয়ে এখনও আলোচনা করা সম্ভব হয়নি। আজ বিকেল অথবা রাতের মধ্যে তার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং একইসঙ্গে তার নিজের ইচ্ছাকেও প্রাধান্য দেওয়া হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত এক চিকিৎসক বলেন, ‘আসলে বর্তমানে খালেদা জিয়ার শারীরিক যে অবস্থা তাতে হাসপাতালেই চিকিৎসা নেওয়া উচিত। কিন্তু এটা তো আর আমি চাইলে হবে না, কারণ তার চিকিৎসার তত্ত্বাবধানে আছেন বড় ছেলের বউ। তাকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

করোনায় আক্রান্তের খবরের পর খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় সুনসান নীরবতা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া সাধারণত ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা করান। এখনও যদি তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়, তাহলে এই হাসপাতালেই নেবেন। সেই অনুযায়ী ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে যোগাযোগ করা আছে।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যান খালেদা জিয়া। এরপর সরকারের নির্বাহী আদেশে সাজা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে গত বছরের ২৫ মার্চ মুক্তি দেওয়া হয় তাকে। পরে আরও দুবার ছয় মাস করে তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ায় সরকার। বর্তমানে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় আছেন তিনি।

এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার করোনা আক্রান্তের খবরে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ থাকলেও কোনো ভিড় নেই তার গুলশানের বাসভবন ফিরোজা এবং রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে। এদিন (১০ এপ্রিল) দুপুরে গুলশানের ৭৯ নম্বর রোডের বাড়ি ফিরোজার সামনে গিয়ে দেখা যায়, খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দুজন এএসএফ সদস্য বসে আছেন। এর বাইরে কয়েকজন সংবাদকর্মী এবং সাদা পোশাকের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন রয়েছেন। দলের কোনো নেতাকর্মীকে সেখানে দেখা যায়নি। একই অবস্থা গুলশানের ৮৬ নম্বর রোডের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনেও।

এএইচআর/এমএআর /জেএস