ফাঁকা সড়কে রিকশার রাজত্ব

করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ ঠেকাতে সর্বাত্মক কঠোর বিধিনিষেধে সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও রাজধানীর ফাঁকা সড়কে রাজত্ব করছে তিন চাকার পরিবহন রিকশা।

তবে অধিকাংশ সড়কেই একের অধিক যাত্রী পরিবহন করলে ট্রাফিক পুলিশের চেকপোস্টে আটকে দেওয়া হচ্ছে রিকশাচালকদের। আবার বিশেষ প্রয়োজনে একই পরিবারের সদস্যরা মুভমেন্ট পাসের মাধ্যমে বা জরুরি প্রয়োজনে একই রিকশায় চলাচলের সুযোগও পাচ্ছেন। 

গণপরিবহণ না থাকায় স্বল্প কিংবা দীর্ঘ দূরত্বের পথ পাড়ি দিতে জরুরি প্রয়োজনে নগরবাসী রিকশার ওপর নির্ভর করছেন। অনেক রিকশাচালক এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছেন। স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া হাঁকছেন। উপায় না পেয়ে বেশি ভাড়াতেই পৌঁছাতে হচ্ছে গন্তব্যে।

বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) রাজধানীর কলাবাগান, শুক্রাবাদ, পান্থপথ, আসাদগেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকালবেলা রিকশা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে বাড়তে থাকে রিকশার সংখ্যা। তবে চাহিদা বেশি থাকায় ভাড়া কমাননি রিকশাচালকরা। যাত্রী-চালকদের মধ্যে দর কষাকষির চিত্র দেখা গেছে অনেক ক্ষেত্রেই। 

অফিস শেষে ধানমন্ডি রাসেল স্কয়ার থেকে গুলিস্তান যেতে চার রিকশাচালকের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে দর-কষাকষি করেন বেসরকারি ব্যাংকের কর্মচারী রিয়াজুল ইসলাম। কিন্তু ২০০ টাকার নিচে গুলিস্তান যেতে রাজি হচ্ছিলেন না কেউই। সবশেষ ১৭০ টাকায় রফাদফা করে রিকশায় উঠলেন তিনি। বললেন, অফিসার বা কর্মকর্তাদের কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু আমরা যারা সাধারণ কর্মচারী, তারা পড়েছি বিপাকে। এই লকডাউনে সব ধরনের গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় বাসা থেকে আসতে এবং যেতে রিকশার ওপরে নির্ভর করতে হচ্ছে। এতে অতিরিক্ত টাকা নষ্ট হচ্ছে।

একই অবস্থা ছিল রাজধানীর গ্রিন রোডেও। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, কাঁচাবাজার এবং জরুরি প্রয়োজনে যারা বাইরে বের হচ্ছিলেন তাদের রিকশায় গুনতে হচ্ছিল বাড়তি টাকা।

জসিম মিয়া নামের এক ব্যক্তি বলেন, গণপরিবহন না থাকায় রিকশাচালকরা আজ অনেক বেশি ভাড়া চাচ্ছেন। এতে আমাদের ভোগান্তি হলেও কিছুই করার নেই। কারণ এখন অন্য কোনো যানবাহনও নেই। অল্প দূরত্বে যেতে হলেও সর্বনিম্ন ৫০ টাকার নিচে কেউ যেতে চাচ্ছেন না। 

তবে বাড়তি ভাড়ার বিষয়টি স্বীকার করতে নারাজ রিকশাচালকরা। তারা বলছেন, পথে পথে পুলিশি ভোগান্তি রয়েছে। লকডাউনে (বিধিনিষেধে) চলাচলের কারণে অনেক সময় গাড়ি আটকে রেখে ডাম্পিংয়ে দিয়ে দিচ্ছে। এতে তাদের খরচও বাড়তি হচ্ছে।

হাফিজুল ইসলাম নামের এক রিকশাওয়ালা বলেন, গ্যারেজ থেকে গাড়ি দিতে চাচ্ছে না। লকডাউনে চলাচলের কারণে গতকাল অনেক গাড়িই পুলিশ ডাম্পিংয়ে দিয়েছে। এখন আমরা যারা রিকশা নিয়ে বেরিয়েছি তারা ডাম্পিং বা জরিমানার ঝুঁকি নিয়েই বেরিয়েছি। তাছাড়া যাত্রীর সংখ্যাও খুব কম।

আরেক রিকশাচালক সোহেল মিয়া বলেন, লকডাউনে সবকিছুর দাম বেড়েছে। পরিবার পরিজন নিয়ে চলার মতো অবস্থা নেই। সরকারি-বেসরকারি কোনো সহযোগিতাও পাই না। এখন যদি অতিরিক্ত টাকা না নিই তবে কীভাবে চলব? রোজায় সবাই কত কিছু দিয়ে ইফতার, সেহেরি করে, আর আমাদের কপালে সাধারণ খাবারই জোটে না। তাই স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি ভাড়াই নিচ্ছি।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের ইন্সপেক্টর মাহফুজ আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, জরুরি প্রয়োজনে অনেকেরই বাইরে বের হতে হচ্ছে। আমরা চেকপোস্টে খেয়াল রাখছি, যাতে অপ্রয়োজনে কেউ যেন বাইরে বের না হন। অনেকেই অসুস্থ রয়েছেন যারা ওষুধ কিনতে আসেন অথবা ব্যাংকে যান তাদের কথা চিন্তা করে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে রিকশার চলাচলে কিছুটা শিথিলতা দেখাচ্ছি। তবে এই সুযোগে যেন নিষিদ্ধ ইজিবাইক বা ব্যাটারিচালিত রিকশা মহাসড়কগুলোতে না চলে সেদিকেও খেয়াল রাখছি।

আরএইচটি/আরএইচ