গত দুইদিনের তুলনায় রাস্তায় আজ মানুষ ও যানবাহনের চাপ অনেকটা কম/ ছবি: ঢাকা পোস্ট

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের তৃতীয় দিন চলছে। অন্যদিকে আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিন। এ দুটোর আমেজে রাজধানী ঢাকার রাস্তা আজ ফাঁকা। গত দুইদিনের তুলনায় রাস্তায় মানুষ ও যানবাহনের চাপ নেই বললেই চলে। আর আজ যারা ঘর থেকে বের হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনে বাসায় ফিরছেন।

শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) রাজধানীর লিংকরোড, গুদারাঘাট, গুলশান-১ ও গুলশান-২ ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। সরেজমিনে দেখা যায়, অন্য দুই দিনের তুলনায় আজ সকাল থেকেই রাস্তায় গাড়ির চাপ অনেকটা কম। খুব জরুরি কাজে বা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে বাসা থেকে বের হয়েছেন কয়েকজন। এছাড়া কেউ বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। গত দুই দিনের তুলনায় আজ রাস্তায় প্রাইভেট কার ও রিকশার সংখ্যাও তুলনামূলক অনেক কম।

রাস্তায় বের হওয়া কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় বিধিনিষেধের মধ্যেও যেসব অফিস খোলা ছিল সেগুলোও বন্ধ। তাই রাস্তায় গাড়ির চাপ কমেছে। অন্য দুইদিন অফিস খোলা থাকায় রাস্তায় গাড়ি ও মানুষ বেশি ছিল৷ কিন্তু আজ বন্ধও সেটা খুবই কম। এছাড়া করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় মানুষও খুব জরুরি কাজ বা বাজার সদাইয়ের কাজ ছাড়া তেমন একটা বাসা থেকে বের হচ্ছেন না।

গুলশান গুদারাঘাটের রিকশাচালক মো. মিজান বলেন, গত দুইদিন সকাল সাড়ে ৯টার ভেতরে চার-পাঁচটা ক্ষ্যাপ মারতে পারছিলাম। কিন্তু আজ মাত্র একটা মারছি। আজ মানুষ নাই। রাস্তা ফাঁকা। অফিস নাই, তাই হয়ত করোনার ভয়ে কেউ বের হচ্ছে না।

এদিকে গুপিপাড়ার বাসিন্দা এনআরবি ব্যাংকের কর্মকর্তা দিদার হোসেন শাহজাদপুর বাজারে যাচ্ছিলেন সাপ্তাহিক বাজার করতে। তিনি বলেন, আজ ব্যাংক বন্ধ হওয়ায় বাসা থেকে বের হওয়ার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু সাপ্তাহিক বাজারের জন্য বের হতে হয়েছে। তবে বাজার শেষে বাসায় ফিরে আজ আর নিচে নামব না।

অন্যদিকে রাস্তায় মানুষেরর চাপ কম থাকায় আজ চেকপোস্টেও তেমন ব্যস্ততা দেখা যায়নি। দুয়েকজন যাত্রী চেকপোস্ট দিয়ে মাঝে মধ্যে যাচ্ছেন, তাদের মুভমেন্ট পাস আছে কি না চেক করতে দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের।

গুদারাঘাট চেকপোস্টে কর্মরত সার্জেন্ট মো. সাহেদ বলেন, অফিস বন্ধ হওয়ায় রাস্তায় আজ তেমন একটা মানুষ নেই। এ পর্যন্ত যারা বের হয়েছেন, তাদের মুভমেন্ট পাস চেক করেছি। তারা জরুরি প্রয়োজনেই বের হয়েছেন।

করোনার সংক্রমণ রুখতে সরকার দেশে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে। ১৪ এপ্রিল থেকে এই বিধিনিষেধ কার্যকর হয়েছে। এর আগে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত ৫ এপ্রিল থেকে সাতদিনের জন্য গণপরিবহন বন্ধসহ মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে ১১ দফা কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সরকার। দুদিন পরে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সকাল-সন্ধ্যা গণপরিবহন চলার অনুমতি দেওয়া হয়। এর একদিন পর খুলে দেওয়া হয় শপিংমলও। এতে সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা নিয়ে সমালোচনা করেন বিশেষজ্ঞরা।

এরই মধ্যে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই বাড়তে থাকে। প্রতিদিন মৃত্যু ও সংক্রমণের নতুন রেকর্ড হচ্ছে দেশে। এ পরিস্থিতিতে জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন ‘প্রয়োজনে আরও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার’।

এরপর গত ৯ এপ্রিল সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর ও সর্বাত্মক লকডাউন’ দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন। পরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীও একই ইঙ্গিত দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১২ এপ্রিল ১৩ দফা নির্দেশনা দিয়ে ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার।

এই বিধিনিষেধ আরোপের পর চেকপোস্ট বসিয়ে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। যারা জরুরি প্রয়োজনে বের হয়েছেন, তারা মুভমেন্ট পাস দেখাতে পারলেই ছাড়া পেয়েছেন। আর যারা যৌক্তিক কোনো কারণ দেখাতে পারেননি, তাদের কাউকে মামলা আবার কাউকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বাসায় পাঠানো হয়েছে।

এদিকে বিধিনিষেধের মধ্যে যাদের একান্তই বাইরে যাওয়া প্রয়োজন হবে তাদের জন্য মুভমেন্ট পাসের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) সকালে movementpass.police.gov.bd ওয়েবসাইট ও অ্যাপের উদ্বোধন করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। 

এমএসি/এসএসএইচ