ড. তারেক শামসুর রেহমান

উত্তরার নিজ ফ্ল্যাট থেকে শিক্ষক ও কলামিস্ট ড. তারেক শামসুর রেহমানের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন।

এদিকে শামসুর রাহমানের প্রকৃত মৃত্যুর কারণ জানতে তার মরদেহ ইতোমধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

শনিবার (১৭ মার্চ) দুপুরে উত্তরা-১৮ নম্বর সেক্টরের রাজউকের আবাসিক প্রকল্পের দোলনচাপা বিল্ডিংয়ের ১৩০৪ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে শামসুর রেহমানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে ঘটনাস্থল থেকে তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উত্তরা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার শচীন মল্লিক বলেন, ড. তারেক শামসুর রেহমানের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমরা আশা করি ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

তিনি বলেন, তবে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি অধ্যাপক শামসুর রহমান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তবে কোনো সন্দেহকে উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। সব বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত করে যাচ্ছি।

তার ভবনে থাকা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক শফিকুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

অধ্যাপক শফিকুর রহমান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, ‘সকাল থেকে তার (ড. তারেক শামসুর রেহমান) কোনো যোগাযোগ না পাওয়ায় ফ্ল্যাটের স্বত্বাধিকারীরা পুলিশকে অবহিত করেন। পুলিশ এসে দরজা ভেঙে তাকে মৃত দেখেন।’

তারেক শামসুর রেহমান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার ও রাজনীতি বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক সদস্য তারেক শামসুর রেহমান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন।

বাংলাদেশ, দক্ষিণ এশিয়া ও বৈশ্বিক রাজনীতি নিয়ে তার অনেক গ্রন্থ রয়েছে। বই লেখার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে কলাম লিখতেন। দেশের অন্যতম সেরা রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে তার খ্যাতি ছিল। বছর দুই আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরে যান এই শিক্ষক। তিনি উত্তরায় নিজ ফ্ল্যাটে একাই বসবাস করতেন। তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রির অধিকারী ড. রেহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। তুলনামূলক রাজনীতি তার আরেকটি গবেষণার বিষয়।

তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ইরাক যুদ্ধ পরবর্তী আন্তর্জাতিক রাজনীতি, গণতন্ত্রের শত্রু-মিত্র, নয়া বিশ্বব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, বিশ্ব রাজনীতির চালচিত্র, উপআঞ্চলিক জোট, ট্রানজিট ইস্যু ও গ্যাস রফতানি প্রসঙ্গ, বাংলাদেশ : রাষ্ট্র ও রাজনীতি, বাংলাদেশ: রাজনীতির ২৫ বছর, বাংলাদেশ: রাজনীতির চার দশক, গঙ্গার পানি চুক্তি: প্রেক্ষিত ও সম্ভাবনা, সোভিয়েত-বাংলাদেশ সম্পর্ক, বিশ্ব রাজনীতির ১০০ বছর ইত্যাদি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের আইভিপি ফেলাে।

এমএসি/ওএফ