প্রয়াত নারীনেত্রী বুলা ওসমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মরণসভার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। তিনি সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বুধবার (২১ এপ্রিল) বেলা ১১টায় অনলাইনে আয়োজিত স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। 

স্মরণসভায় প্রয়াত নারী নেত্রীর উদ্দেশ্যে স্মৃতিচারণ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, রোকেয়া সদন সম্পাদক নাসরিন মনসুর, লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক অ্যাড. মাখছুদা আখতার লাইলী ও প্রয়াত নারীনেত্রীর পরিবারের সদস্য পুত্র এশরার ওসমান সুমিত।

সভার শুরুতে প্রয়াত নেত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। নীরবতা পালন শেষে সংগীত পরিবেশন করেন সংগীত শিল্পী বুলবুল ইসলাম। আবৃত্তি করেন বিশিষ্ট আবৃত্তিকার লায়লা আফরোজ। এছাড়াও সভায় সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী ও সংগঠনের সুহৃদ শারমিন সাথী ইসলাম এবং সংগীত শিল্পী ডা. সুস্মিতা আহমেদ। 

সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, করোনায় অনেক নিবেদিত সংগঠকদের হারিয়েছি, যাদের একজন বুলা। ৫০ বছরের জীবনের ইতিহাসে তার সঙ্গে থাকা স্মৃতি আজকের স্মরণসভায় বলে শেষ করে যাবে না। বুলার মত মানুষ মহিলা পরিষদের জন্য গৌরব। সাম্প্রদায়িক চেতনা, প্রগতিশীল মনোভাব ও গণতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ থেকে যেভাবে তিনি মহিলা পরিষদকে ধারণ করেছেন তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

তিনি বলেন, পরিবারের মধ্যে থেকেও আত্মসম্মানবোধ নিয়ে নিজের অস্তিত্বকে ধরে রাখার দিকটি তার মাঝে ছিল প্রবল। সাধারণ হলেও তার অসাধারণ ব্যক্তিত্ববোধ, তার আদর্শবাদিতা আমাদের কাছে তাকে চিরস্মরণীয় করে রাখবে। সংগঠনের নিয়মিত সভা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডসহ সব কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বুলার ওসমানের অভাব সংগঠন সবসময়ই অনুভব করবে।

সভায় বুলা ওসমানের জীবনী পাঠ করেন সংগঠনের নির্বাহী কর্মকর্তা রুনু দাশ। তিনি বলেন, মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের এই মুক্তিযোদ্ধা নারীনেত্রী ১৯৬৯-এর গণ-আন্দোলনসহ দেশের সব প্রগতিশীল আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকে কাজ করেছেন। বুলা আহমেদ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিনিধি হিসেবে শিশু কল্যাণ পরিষদের একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে নারী আন্দোলনসহ সব প্রতিবাদ-আন্দোলনে সহযোদ্ধা ছিলেন। তার প্রয়াণে নারী আন্দোলনের তথা বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা কখনো পূরণ হওয়ার নয়।

সভায় ওসমানের স্মৃতিচারণ করে বলেন, বুলা ওসমান নীরবে-নিভৃতে কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল চেতনার একজন স্নেহশীল  মানুষ। কারো সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হলে তা সবসময় রক্ষা করতেন। 

তারা বলেন, সংগঠনের সাংস্কৃতিক কর্মসূচী বাস্তবায়নে তার অভাব অপূরণীয়। তার রেখে যাওয়া সুদীর্ঘ কাজের মধ্যেই সবার মাঝে বেঁচে থাকবেন। সংগঠন তার অবদানকে সবসময় শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। 

স্মরণসভা আয়োজনের জন্য এশরার ওসমান সুমিত সংগঠনকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, মায়ের সঙ্গে মহিলা পরিষদের সম্পর্ক অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ছিল। সংগঠনের জন্য তার ভালবাসা ছিল প্রবল। নির্দ্বিধায় তিনি সংগঠনের জন্য কাজ করতেন। 

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের সহধর্মিণী বুলা ওসমান গত ১৭ জানুয়ারি (রোববার) সকালে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন।  মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।

জেইউ/ওএফ