বাংলাদেশের বিভিন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি এ দেশের অমূল্য সম্পদ এবং জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থেই এর বিকাশে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দরকার বলে মন্তব্য করেছেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার।

বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) আয়োজিত অমর একুশে বইমেলায় এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

দীপংকর তালুকদার বলেন, সাংস্কৃতিক নানা উপাদান এসব জাতিগোষ্ঠীর সক্ষমতার। যুগ যুগ ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও জাতিসত্তা এবং অ-উপজাতীয় জনগণ বসবাস করছে। উপজাতীয়রা যেমন একদিকে সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের অধিকারী, অন্যদিকে তারা মূল জনগোষ্ঠীর অপরিহার্য অংশ।

তিনি বলেন, জাতীয় উন্নয়নের জন্যই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সংস্কৃতির বিকাশে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দরকার। ভাষা যদি না থাকে, তবে সংস্কৃতি বিলুপ্ত হবে। তাই প্রয়োজন বাংলাদেশের অনেক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতির সঠিক লালন। সংখ্যাগুরু মানুষের উচিত সংখ্যায় কম মানুষের সংস্কৃতির বিকাশে এগিয়ে আসা।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ১৯৯৬ সাল থেকে একটি নীতিমালার আলোকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা (পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত) শীর্ষক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা শুরু করা হয় এবং কর্মসূচিটি চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা পূরণে সর্বদা সচেষ্ট।

চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বাঙালি জীবনে একুশ ফিরে আসে নবজীবনের ডাক নিয়ে। একুশ আসে ভাষা চেতনায় গোটা জাতিকে শাণিত, উদ্ধুদ্ধ করতে। কেননা একুশ আমাদের মননের বাতিঘর বলে ফেব্রুয়ারি মাস আমাদের জাতিসত্তার বিকাশে এক অনবদ্য সংযোজন। অসাধারণ আত্মত্যাগের এক বিশাল অর্জন। পৃথিবীর ইতিহাসে বাঙালি এক অনন্য জাতি। পৃথিবীতে খুব কম জাতি আছে যারা ভাষা, সংস্কৃতি ও জাতিসত্তা রক্ত দিয়ে রক্ষা করেছে। রক্ত দিয়ে বাঙালি নিজের রাষ্ট্র তৈরি করেছে, তার নিজস্ব সংস্কৃতিকে বিকশিত করছে, অসম্প্রদায়িক চেতনা তুলে ধরছে।

তিনি বলেন, একুশের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। একুশের চেতনা হারিয়ে ফেলা যাবে না। বিশেষ করে তরুণ সমাজকে একুশের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের কোনো সিটি করপোরেশন বই মেলার আয়োজন করে না। একমাত্র চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এই বইমেলার আয়োজন করে। চট্টগ্রামের এই বই মেলা এখন তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরী, লেখক, সাহিত্যিকদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক নৃ-গোষ্ঠী গবেষক ড. আজাদ বুলবুলের সভাপতিত্বে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন কবি ও নাট্যজন শিশির দত্ত, মাটিরাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ প্রশান্ত ত্রিপুরা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আনন্দ চাকমা। এসময় উপস্থিত ছিলেন  প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা ও মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম। আলোচনা সভা শেষে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের উপজাতীয় গান ও নৃত্য শিল্পীরা অংশগ্রহণ করেন।

এমআর/এসএম