জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ডাকা দুই দিনব্যাপী শীর্ষ সম্মেলন বসছে ২৩ ও ২৪ এপ্রিল (বাংলাদেশ সময়)। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও ৪০ জন বিশ্বনেতা অংশগ্রহণ করবেন।

সম্মেলনে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে নিজেদের সুবিধা-অসুবিধার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) সভাপতি তথা ৪৭টি দেশের পক্ষে বিভিন্ন উদ্যোগ ও সহায়তার বিষয়ে কথা বলবে ঢাকা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশ সময় ২৩ ও ২৪ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় সম্মেলনের প্রথম দিন (শুক্রবার) ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভাষণে প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু ইস্যুতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু তুলে ধরবেন। বিশেষ করে, প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোকে যত দ্রুত সম্ভব বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে সীমিত রাখার আহ্বান, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া প্রতি বছর ১০০ কোটি ডলার তহবিল সংগ্রহের কাজটি নিশ্চিত করা; যে অর্থের ৫০ শতাংশ অভিযোজন এবং ৫০ শতাংশ প্রশমনে ব্যয় করা যায়, পরিবেশবান্ধব সবুজ এনার্জি কেন্দ্রিক প্রযুক্তির বিনিময় সহায়তা, বনায়নে অধিকতর অর্থায়নসহ জলবায়ু উদ্ধাস্তু রোধে কার্যত পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘জলবায়ু মোকাবিলায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে এটার মোকাবিলায় আমাদের সুনাম রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব নেতাদের সামনে জলবায়ু ইস্যুতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলো তুলে ধরবেন। তিনি ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) সভাপতি হিসেবে জলবায়ুতে ক্ষতিগ্রস্ত ৪৭টি দেশের পক্ষে কথা বলবেন।’

বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, রাশিয়া, ভারত, জাপান, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, তুরস্ক, কানাডা, সৌদি আরবসহ ৪০টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা এ সম্মেলনে যোগ দেবেন। চলতি বছরের নভেম্বরে যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। বাইডেনের এ সম্মেলন বিশ্ব নেতাদের জন্য গ্লাসগোতে হতে যাওয়া শীর্ষ সম্মেলনে নিয়ে নতুন উদ্যোগের বার্তাও আসতে পারে।

বাইডেনের সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে যাওয়া বাংলাদেশ কি কি বিষয় তুলে ধরবে-জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘জলবায়ু সংক্রান্ত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলো তুলে ধরব আমরা। আমরা সিভিএফের সভাপতি হিসেবে জলবায়ুতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরব। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৫ ডিগ্রিতে সীমিত রাখার বিষয়ে আমরা কথা বলব। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অনুযায়ী, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, প্রতি বছর ১০০ কোটি ডলার তহবিল দেবে; কিন্তু সেটা আমরা পাইনি। আমরা চাইব সেই অর্থ যেন নিশ্চিত করা হয়, এতে ৫০ শতাংশ অভিযোজন এবং ৫০ শতাংশ প্রশমনে ব্যয় করা যায়। আমরা বিশ্বাস করি, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা করতে হলে প্রশমন ও অভিযোজনের বিকল্প নেই; এই বিষয়গুলো আমরা উপস্থাপন করব।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘আমরা রিনিউএবলএনার্জি চাই, এটার পরিমাণ ৫ দশমিক ৮ মিলিয়নে নিতে চাই; কিন্তু এটা খুব ভ্যয়বহুল। আমরা গ্রিন এনার্জি প্রযুক্তি চাই, আমরা চাই আমাদের এসব সেক্টরে আমেরিকান সরকার এবং তাদের বেসরকারি সেক্টরে বিনিয়োগ করুক। আমাদের রিনিউএবল এনার্জির পরিমাণ যাতে বাড়ে। জলবায়ুর প্রভাবের কারণে আমাদের নদী ভাঙন হয়, আমরা বাঁধগুলো আরও উঁচু করতে চাই; এ বিষয়ে আমরা আমেরিকান সহযোগিতা চাই। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে আমাদের দেশে প্রতি বছর যে উদ্ধাস্তু বাড়ছে সেটা আমরা তুলে ধরব। আমরা অধিকতর বনায়ন চাই, এক্ষেত্রে আমরা আমেরিকান সাহায্য চাই।’

গত ৯ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ডাকা জলবায়ু বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলনের আমন্ত্রণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পৌঁছে দিতে ঢাকা সফর করেন প্রেসিডেন্টের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি। সেই সফরে কেরি জানান, বাইডেনের প্রশাসন প্যারিস চুক্তির আলোকে আবারও বিশ্বকে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি থেকে রক্ষার প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিতে চায়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে পাশে চেয়েছেন বাইডেনের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত।

এনআই/এসএম