চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন। বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।

সংস্থাটি জানায়, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে পুলিশের গুলির ঘটনা মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বাংলাদেশের সংবিধান স্বীকৃত শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার ক্ষুণ্ণ করে। আর্টিকেল নাইনটিন লক্ষ্য করছে সাম্প্রতিককালে আয়োজিত অনেকগুলো মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়েছে। পুলিশ নিষ্ঠুরভাবে সভা-সমাবেশ দমন করছে। বিশেষ করে নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অতিরিক্ত বল প্রয়োগের ঘটনা ঘটে চলেছে।

আর্টিকেল নাইনটিন বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেছেন, শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ের গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করার জন্য পুলিশ বাহিনীর অপ্রয়োজনীয় শক্তি প্রয়োগের নিন্দা জানাই।

ফারুখ ফয়সল বলেন, সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।’ সংবিধান প্রদত্ত এই অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের, কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি এর উল্টো প্রবণতা।

শ্রমিকদের দাবি ছিল, তারা ভালো কর্ম পরিবেশ, ঈদ বোনাস, রোজার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর্ম ঘণ্টা নির্ধারণ, কাজের সময় পর্যাপ্ত বিরতি, অন্যায় ছাঁটাই বন্ধ করা ইত্যাদি। এসব দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করছিলেন শ্রমিকরা, যেখানে পুলিশ বিনা উস্কানিতে তাদের ওপর গুলি চালিয়েছে। এতে ৫ জন শ্রমিক প্রাণ হারান এবং আরও অনেকে গুরুতর আহত হয়েছেন।

কোভিড-১৯ মহামারিটি অব্যাহত থাকায় শ্রমজীবী ও দৈনন্দিন বেতনে কাজ করা শ্রমিকদের জীবনযাত্রা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। শ্রমিকদের যথাযথ মজুরি না পরিশোধ করা বাংলাদেশ শ্রম আইন এবং মৌলিক মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘন। এস আলম গ্রুপ বিশেষত এইরকম কঠিন সময়ে তাদের কর্মীদের বেতন ঠিকভাবে দিতে ব্যর্থ হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। এই ধরনের ঘটনার নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। এস আলম গ্রুপকে বাংলাদেশ শ্রম আইন যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে।

বাঁশখালী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে শ্রমিকদের ওপর এ ধরনের নির্যাতন ও সহিংসতার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালে স্থানীয় জনগণের প্রতিবাদের মুখে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। তখন ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

ফারুখ ফয়সল বলেন, ‘প্রতিবাদ করার অধিকার নাগরিক স্বাধীনতা এবং তা সরকারের জবাবদিহিতাকে নিশ্চিত করে। সরকারকে পুলিশের ক্রমবর্ধমান নিষ্ঠুরতার এবং ৫ জন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা নিশ্চিত করতে হবে।’

এসআর/এমএইচএস