দর্শনার্থী শূন্য চিড়িয়াখানায় বাঘ শাবক ‘জো বাইডেন’/ ছবি: ঢাকা পোস্ট

জো বাইেডন। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার বাঘ দম্পতি রাজ-জয়ার সন্তান। জন্মের পর মায়ের অবহেলায় মরতে বসেছিল এ ব্যাঘ্র শাবক। এরপর থেকেই মানুষের সঙ্গে বসবাস। মানুষের কোলেপিঠে, হেসে খেলে বেড়ে উঠেছিল বাঘের শাবকটি। জন্ম নেওয়ার সাড়ে পাঁচ মাস পর বুধবার (২১ এপ্রিল) তাকে খাঁচায় দেওয়া হয়েছে। সরকারের কঠোর বিধিনিষেধের কারণে দর্শনার্থী শূন্য চিড়িয়াখানায় খাঁচা থেকে প্রতিদিন এক ঘণ্টার জন্য বের করা হয় বাঘটিকে, যাতে মুক্তভাবে ছোটাছুটি করতে পারে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ও চিকিৎসক শাহাদাত হোসেন শুভ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা খাঁচায় বাঘের শাবকটি রেখেছি, যেন সে অন্য বাঘ দেখে আচরণ বুঝে নেয়। এর মধ্যে তাদের ভাব বিনিময় যেমন হবে, তেমনি বাঘসুলভ আচার-আচরণ আয়ত্ত করবে। তারপর তাকে বাঘের খাঁচায় নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, আপাতত জো বাইডেন খাঁচায় একা থাকবে। যেহেতু এতদিন আমরা তাকে সঙ্গ দিয়েছি, হঠাৎ যেন সে নিজেকে নিঃসঙ্গ না ভাবে সেজন্য আমরা এ মাসটা তাকে সঙ্গ দেব। দুধ খাওয়াব। তারপর আস্তে আস্তে সে নিজের সঙ্গী খুঁজে নেবে।

তিনি আরও বলেন, সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে চিড়িয়াখানা এখন দর্শকশূন্য। তাই প্রতিদিন বাইডেনকে এক ঘণ্টা করে চিড়িয়াখানায় খেলতে দেওয়া হয়। মে মাসের ১৪ তারিখে ‘জো বাইডেন’র ছয় মাস পূর্ণ হবে। এরপর থেকে আর বের করা হবে না শাবকটিকে।

চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বাঘ দম্পতি রাজ-জয়ার সংসারে গত বছরের ১৪ নভেম্বর তিনটি শাবক জন্ম নেয়। জন্মের পরপরই বাচ্চাদের দুধ পান করানো বন্ধ করে দেয় বাঘিনী জয়া। মারা যায় দুটি শাবকও। আরেকটির প্রাণ রক্ষায় নিজেদের দায়িত্বে নেন চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

এরপর থেকেই চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. শুভ দিনরাত এক করে বাঘিনীর হিংস্র থাবা থেকে বাঁচিয়ে তুলেছেন জো বাইডেনকে। শাবকটিকে ছোট থেকো বড় করার প্রক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, জন্মের পর মায়ের দুধ না পেয়ে তিনটির মধ্যে দুটি শাবকের মৃত্যু হয়। ফলে অপরটিকে আমরা মায়ের কাছ থেকে সরিয়ে আলাদা রাখি।  ছোট শিশুর মতোই ফিডারে দুধ খাওয়ানো হতো জো বাইডেনকে। শুরুতে বাজারে পাওয়া বিড়ালের দুধ খাওয়ানো হতো। পরে ছাগলের দুধের সঙ্গে অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। একপর্যায়ে মাংস খাওয়ানো শুরু হয় শাবকটিকে। এতে শারীরিকভাবে বেশ পরিবর্তন আসে শাবকটির। এছাড়া কাপড়-বল দিয়ে বাঘ শাবকটির সঙ্গে দিনের নির্দিষ্ট সময় খেলাধুলায় কাটিয়েছেন চিড়িয়াখানার কর্মীরা। এভাবে আস্তে আস্তে শঙ্কামুক্ত হয়ে সজীব ও চঞ্চল হয়ে ওঠে শাবকটি।

তিনি আরও বলেন, বাঘটির ওজন এখন ২১ কেজির সামান্য বেশি। বয়স পাঁচ মাস পূর্ণ হওয়ায় তাকে খাঁচায় দেওয়া হয়েছে। শাবকটি এখন ৬০০ মিলিলিটার দুধ ও দেড় কেজি মাংস খাচ্ছে। মে মাসের ১৪ তারিখ থেকে দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দিয়ে স্বাভাবিক বাঘ যেসব খাবার খায় তা খাওয়ানো হবে। 

শুভ বলেন, বলতে গেলে দিন যত যাচ্ছিল, ততই সবাইকে আপন করে নিচ্ছিল সে। কিন্তু তার স্থান যে মানবকূলে নয়, ফলে চিরাচরিত নিয়মে তাকে ফিরে যেতে হলো সেই বন্দি খাঁচায়।

বাঘ শাবকটির নাম ‘জো বাইডেন’ কীভাবে হলো? এ প্রশ্নের জবাবে চিড়িয়াখানার কিউরেটর শুভ বলেন, সাধারণত  চিড়িয়াখানায় জন্ম নেওয়ার এক মাস পর আমরা প্রাণীর নাম দিয়ে থাকি। বাঘ শাবকটির জন্ম হয় নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে। আর ডিসেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের জয় নিশ্চিত হয়। তার নির্বাচনে একটি ওয়াদা ছিলে জয়লাভ করতে পারলে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফিরে আসবেন। উনি ফিরেও এসেছেন। এছাড়া জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে বাঘের সংখ্যা দিন-দিন কমে আসছে। তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বাঘটির নাম ‘জো বাইেডন’ রাখা হয়েছে।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে বাঘের আগের খাঁচা সম্প্রসারণ করে সাড়ে সাত হাজার বর্গফুট করা হয়েছে। এতে বাঘ ভালো পরিবেশ পাবে, দর্শনার্থীরাও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে বাঘ দেখতে পারবেন। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বর্তমানে ছয়টি বাঘ আছে। এছাড়া ৬৬ প্রজাতির ৬৫০টি প্রাণী আছে।

কেএম/এসএসএইচ