মার্চে আইসিইউতে ভর্তি হন ৫৪ জন, মারা যান ৩৭ জন

ফোনে মায়ের মৃত্যুর সংবাদ আত্মীয়কে জানাতে গিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠছেন ওমর ফারুক। কিছুক্ষণ আগেই মাকে হারিয়েছেন। সেই শোক সইতে পারছেন না তিনি। পাশে বসা বৃদ্ধ বাবাও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। 

এই চিত্র রাজধানীর উত্তরায় কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের আউটডোর প্রাঙ্গণের। গত কয়েকদিনে সরেজমিনে এমন দৃশ্য অনেকবার দেখতে পেয়েছেন এই প্রতিবেদক। প্রতিদিনই হাসপাতালটিতে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে চোখে পড়েছে প্রিয়জন হারানো মানুষদের কান্না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালটিতে সাম্প্রতিক সময়ে মৃত্যু হার যেমন বেড়েছে, রোগী ভর্তির সংখ্যাও তেমনি ঊর্ধ্বমুখী। হাসপাতালটিতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি হওয়া প্রায় দুই তৃতীয়াংশ রোগীই মারা যাচ্ছেন। কোনো কিছুতেই যেন করোনার ছোবল থেকে রোগীদের রক্ষা করতে পারছেন না চিকিৎসকরা।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, গেল জানুয়ারিতে ১২৮ জন করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি হন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন ১০৬ জন। আইসিইউতে ভর্তি হন ৪৩ জন। মারা যান ২২ জন। ফেব্রুয়ারিতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৯০ জন। আইসিইউতে ভর্তি হন ৩৬ জন। এরমধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ২৪ জন।

আইসিইউতে ভর্তি হওয়া প্রায় দুই তৃতীয়াংশ রোগীই মারা যাচ্ছেন

মার্চ মাসে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যায়। মোট রোগী ভর্তি হন ৩৩৪ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেন ১৬৭ জন। আইসিইউতে ভর্তি হন ৫৪ জন। মারা যান ৩৭ জন। এপ্রিলে এসে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। গত ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৭৯ জন ভর্তি হন হাসপাতালটিতে। আইসিইউতে ভর্তি হন ৮৪ জন। মারা যান ৬৬ জন। মারা যাওয়া রোগীদের ৯৯ শতাংশকেই আইসিইউতে নেওয়া হয়েছিল।

এ হিসাবে প্রায় দুই তৃতীয়াংশ রোগী আইসিইউতে ভর্তি হওয়ার পর মারা যাচ্ছেন। হাসপাতালটিতে আইসিইউ বেডের সংখ্যা ২৬টি।

হাসপাতালটির আইসিইউ ইউনিটের দায়িত্বে থাকা অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ও ক্রিটিক্যাল কেয়ারের বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. আসাদুজ্জামানের সঙ্গে আলাপকালে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল। আইসিইউতে ভর্তি হওয়া রোগীদের জন্য কিছু করতে না পারার অসহায়ত্বও দেখা গেল তার মধ্যে।

এ চিকিৎসক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘রোগীদের আমরা কোনো সহযোগিতাই করতে পারছি না। আইসিইউতে ভর্তি হওয়ার পরপরই অধিকাংশ রোগী মারা যাচ্ছেন। গতবার এ পরিস্থিতি ছিল না। এবার খুব বেশি সহযোগিতা করতে পারছি না। চিকিৎসা শুরুর আগেই মারা যাচ্ছেন।’

ডা. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ধরুন আইসিইউতে ১০ জন রোগী ভর্তি হলো। খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে একাধিক রোগী মারা যাচ্ছেন। গত সপ্তাহে আইসিইউতে একটা বেড খালি ছিল। এই একটা বেডে চারজন রোগী ভর্তি হয়েছেন, তিনজনই মারা গেছেন। সকালে দেখা যাচ্ছে বেড খালি, দুপুরে ভর্তি। সন্ধ্যা বা রাতে মৃত্যু। খুব দ্রুত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন রোগীরা।’

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর কোভিড ডেডিকেডেট হাসপাতাল হিসেবে সেবা দেওয়া শুরু করে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে।

একে/এসএসএইচ/জেএস