১০ মে নয়, মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে পোশাক শ্রমিকদের ঈদ বোনাস ও এপ্রিল মাসের মজুরি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট। শুক্রবার (৩০ এপ্রিল) সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে এ দাবি জানান সংগঠনটির সভাপতি আহসান হাবিব বুলবুল এবং সাধারণ সম্পাদক সেলিম মাহমুদ। একই দাবিতে আলাদাভাবে আরও একটি বিবৃতি পাঠিয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (জি-স্কপ)।

বিবৃতিতে বলা হয়, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের দেওয়া ‘সর্বাত্মক লকডাউন’ চলমান আছে। এই ‘লকডাউনের’ মধ্যেও পোশাক শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতি ও রফতানির প্রয়োজনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উৎপাদনের চাকা সচল রেখেছে। কিন্তু সরকার শ্রমিকদের এই ত্যাগের কোনো স্বীকৃতি দেয়নি। ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও ঝুঁকি ভাতা দেওয়ার উদ্যোগ নেয়নি। পরিবহনের ব্যবস্থা না করে কারখানা চালু রেখে, স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রয়োজনীয় আয়োজন ছাড়াই কাজ করানোর মাধ্যমে শ্রমিকদের দুর্ভোগে ফেলার জন্য দায়ী মালিকদের বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

সরকার নগ্নভাবে মালিকদের পক্ষ নিয়েছে মন্তব্য করে বিবৃতি বলা হয়, করোনা দুর্যোগের সুযোগ নিয়ে সময়মতো মজুরি পরিশোধ না করা, মজুরি কর্তন, ছাঁটাই, কারখানা বন্ধ বা স্থানান্তর করে ক্ষতিপূরণ না দিয়ে শ্রমিকদের চাকরিচ্যুতি ইত্যাদি বহুভাবে শ্রমিকদের ওপর নিপীড়নের ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা মালিকদের স্বার্থ রক্ষা করেছে, তাদের শোষণ-দায়িত্বহীনতার মাত্রা বাড়াতে উৎসাহিত করেছে। করোনা দুর্যোগের মধ্যে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায় না নিয়ে সরকার কর্মঘণ্টা সংক্রান্ত শ্রম আইনের ধারাসমূহ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে নগ্নভাবে মালিকদের পক্ষ নিয়েছে। ২০ রোজার মধ্যে পোশাক শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করার অধিকাংশ শ্রমিক সংগঠনের দাবিকে উপেক্ষা করে ১০ মে’র মধ্যে বেতন-বোনাস পরিশোধের নির্দেশনা এক পাক্ষিকভাবে মালিকদের স্বার্থ রক্ষায় সরকারের অবস্থানের ধারাবাহিকতা।

এতে আরও বলা হয়, আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করছি সুযোগসন্ধানী মালিকদের জন্য ১০ মে শবে কদর, তার আগে ৭ ও ৮ মে শুক্র-শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনের কারণ দেখিয়ে নির্দেশনা লঙ্ঘন করার এবং বরাবরের মতো শেষ মুহূর্তের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে শ্রমিকদের ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করার পথ উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। এই ধরনের আচরণের পুনরাবৃত্তি শ্রমিকদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের জন্ম দিচ্ছে।

শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি করে বিবৃতিতে বলা হয়, মে মাসের প্রথম সপ্তাহ অর্থাৎ ৬ মে’র মধ্যে পোশাক শ্রমিকদের কমপক্ষে এক মাসের মজুরির সমান ঈদ বোনাস এবং এপ্রিল মাসের মজুরি পরিশোধ করতে হবে। না হলে মে দিবসের চেতনায় ঐক্যবদ্ধভাবে কর্মঘণ্টা, ন্যায্য মজুরি, অবাধ ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, গণতান্ত্রিক শ্রম আইন নিশ্চিত করতে পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

এমএইচএন/এসএসএইচ