হাজার অতিথির মেহমানখানায় তৃপ্তির ইফতার
সাজিয়ে রাখা হয়েছে ইফতার
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ চলছে। এ বিধিনিষেধ চলাকালে নিম্ন আয়ের অনেকেই কাজ হারিয়েছেন। আবার অনেকেরই আয় কমেছে। এর ওপর চলছে রমজান মাস। সব মিলিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের একেবারে নাকাল অবস্থা।
দেশে যখন এমন অবস্থা চলছে, ঠিক তখন নিম্ন আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে ‘মেহমানখানা’। রমজানের শুরু থেকেই মেহমানখানায় হাজারেরও বেশি মানুষের ইফতারের আয়োজন করে এটি। রাজধানীর লালমাটিয়া ডি ব্লকেই এলাকার বাসিন্দাদের স্বেচ্ছাশ্রমে চলছে মেহমানখানা। প্রতিদিন হাজারো নিম্ন আয়ের বাসিন্দা এখানে ইফতার করতে আসেন।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লালমাটিয়ার ডি ব্লকের সড়কের এ মেহমানখানায় বিকেল তিনটার পর থেকেই শুরু হয় ইফতার তৈরির কর্মযজ্ঞ। ইফতারের যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন করেন এলাকার বাসিন্দারা। ইফতার তৈরি ও রান্নার কাজে হাত লাগান এলাকার তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সীরা। ইফতারের জন্য তৈরি হয়, লেবুর শরবত, ছোলা, পেঁয়াজু ও বেগুনি। ইফতার তৈরি শেষ হলেই তা পরিবেশনের জন্য আলাদা আলাদা প্লেট এবং ব্যাগে রাখা হয়।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা পোস্টের সঙ্গে আলাপকালে মেহমানখানার উদ্যোক্তাদের একজন সাইফুল আলম শোভন জানান, এলাকাবাসীর সহযোগিতায় হাজার মানুষের একত্রে ইফতার আয়োজন সম্ভব হয়েছে। ইফতারে রাখা হয় চিড়া, মুড়ি, বুট, খেজুর ও জিলাপি। শুক্রবার স্পেশালি রাখা হয় মাংসের খিচুড়ি। গত বছর লালমাটিয়ার এ মেহমানখানার কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। প্রতিদিন ইফতার আয়োজনে খরচ হয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা।
তিনি বলেন, অনেক সময় দোকান থেকে বাকি নিয়েও চালিয়ে নেওয়া হয় মেহমানখানার কার্যক্রম। শেষ সময়ে লোক সমাগম বেশি হলে বেড়ে যায় খরচ। বিকাশে পাওয়া এবং সরাসরি অনুদানের মাধ্যমেই মেহমানখানার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। মেহমানখানা কোনো পেশাদার সংগঠন নয়। শুধু এই মহামারির সময়ে মানুষের পাশে থাকতেই এ আয়োজন।
ভিন্ন এই আয়োজনের আরেক উদ্যোক্তা আসমা আক্তার লিজা জানান, মানুষের জন্য কিছু করার প্রয়াস থেকেই মেহমানখানার যাত্রা শুরু হয়। সেচ্ছাসেবীদের প্রচেষ্টায় প্রতিদিন হাজারো মানুষের ইফতার আয়োজন সম্ভব হয়।
লালমাটিয়ার এই মেহমানখানায় মেহমান হয়ে বিকেল পাঁচটা থেকে ছয়টার মধ্যেই ভিড় জমান নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে শুরু করে পথচারী। তবে রিকশাচালকদের উপস্থিতি থাকে চোখে পড়ার মতো। বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে ইফতার আয়োজনে যোগ দিতে লালমাটিয়ার আশপাশের এলাকা বিশেষ করে মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, ঝিগাতলা ও ফার্মগেট এলাকার রিকশাচালকরা আসতে থাকেন সারিবদ্ধভাবে। এখানে হাজার মানুষ সমবেত হলেও নেই কোনো হৈ-হুল্লোড়, সেচ্ছাসেবীরাই সবার হাতে ইফতার পৌঁছে দেন। অনেক পথচারী আবার লাইনে দাঁড়িয়ে সংগ্রহ করেন।
প্রতিদিন ইফতার আয়োজনে আসা রিকশাচালক মনু মিয়া বলেন, আধাবেলা রিকশা চালাইয়া যা ইনকাম হইছে তা দিয়া চাল কিনমু নাকি ইফতার খামু, তাদের ইফতার পাইয়া আমার খুব উপকার হইছে।
লালমাটিয়ায় সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন আনিসুর রহমান। মেহমানখানার ইফতার তার খুব পছন্দের। তাই রোজ লাইনে দাঁড়িয়ে ইফতার সংগ্রহ করেন। ইফতারে যোগ দিতে আসা রিকশাচালক কামাল বলেন, গত রমজান থেকেই এখানে ইফতার করি, তাগোর ইফতার অনেক ভালো। ইফতারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মো. জসিম পেশায় একজন পরিচ্ছন্নকর্মী। আলাপ কালে তিনি বলেন, এখানের খাবার বেশ মজার খাইয়া খুব শান্তি পাই।
এ আয়োজনে সবার মাঝে ইফতার পৌঁছে দিতে স্বেচ্ছাসেবীদের আন্তরিকতার অভাব নেই। তবে, মেহমানখানা কোনো পেশাদার সংগঠন নয় বলে, রমজানের পর এর কার্যক্রম সংকুচিত করে শুধুমাত্র সপ্তাহে একদিন খাবার বিতরণ কার্যক্রম চালু রাখার কথা জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
এসআর/আরএইচ